ময়মনসিংহমঙ্গলবার , ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
আজকের সর্বশেষ সবখবর

অর্কিডের নাম শেখ হাসিনা

হরিদাস ঠাকুর
সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১ ১২:০২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

‘জনগণের ভালোবাসা আর ইচ্ছাই আমাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অধিষ্ঠিত করেছে। আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নিজ দেশের জনগণ ও দেশের সেবা করা এবং আমার পিতার ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করা।’-২৪ নভেম্বর ২০১০, রুশ ফেডারেশনের পিটার্সবার্গ শহরের সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত ভাষণে কথাটি বলেছেন শেখ হাসিনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজা। আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে যিনি বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। আজ তাঁর ৭৫তম জন্মবার্ষিকী। আমরা তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই।
শেখ হাসিনা উত্তরাধিকার বহন করছেন এমন একজন মহাপুরুষের যিনি বাংলাদেশের তথা পৃথিবীর ইতিহাসে একজন রাজনীতির কবি (Poet of Politics)। সূর্যসেন, প্রীতিলতা, ক্ষুধিরাম, বাঘা যতীন, তীতুমীর, ভাসানী, চিত্তরঞ্জন, সোহওরাওয়ার্দী, সুভাষ বসু, রোকেয়া, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল ও অসংখ্য সংগ্রামী মানুষ এবং শহীদদের বীরত্ব ও ত্যাগের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু নামক মহীরুহের আবির্ভাব। শেখ হাসিনা সেই মহীরুহের উত্তরাধিকার। তাঁর নেতৃত্বেই আজ বাংলাদেশ উৎপাদনের অসীম রেখা (Production Possibility Frontier) হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।
শেখ হাসিনা একজন মমতাময়ী মা-স্নেহময়ী বোন এবং দায়িত্বশীল একজন জনপ্রতিনিধি। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতির পুস্পাদ্যোনে একটি অনন্য অর্কিড। অর্কিড সৃষ্টি জগতের এক অনুপম সৌন্দর্যের নাম। অর্কিড এই শব্দটি উচ্চারিত হলেই আমরা মনের মাঝে ¯স্রষ্টার সৃষ্টজগতের এক ভিন্ন আঙ্গিকের সৌন্দর্য বাতাবরণের পরশ পাই। অর্কিড বা অর্কিড পরিবার (ইংরেজি: Orchidaceae family) হচ্ছে সপুষ্পক উদ্ভিদের একটি পরিবারের নাম। এরা রঙিন, সুগন্ধি আর বহুলবিস্তৃত হয়। Asteraceae পরিবারসহ, দুটি বৃহৎ পরিবারে বর্তমানে ৮৮০টি গণে ২১,৯৫০ থেকে ২৬,০৪৯টি গৃহীত প্রজাতি আছে। সিংহভাগ অর্কিডই পরাশয়ী, তবে ভূমিজ অর্কিডও আছে, আছে মৃতজীবীও। পৃথিবীর সব মহাদেশেই অর্কিড দেখা যায়।
অর্কিড সম্পর্কে উইকিপিডিয়া থেকে আমরা নিম্নরূপ তথ্য পেতে পারি:
The Orchidaceae are a diverse and widespread family of flowering plants, with blooms that are often colorful and fragrant, commonly known as the orchid family. Along with the Asteraceae, they are one of the two largest families of flowering plants. The Orchidaceae have about 28,000 A currently accepted species, distributed in about 763 genera. The determination of which family is larger is still under debate, because verified data on the members of such enormous families are continually in flux. Regardless, the number of orchid species is nearly equal to the number of bony fishes, more than twice the number of bird species, and about four times the number of mammal species. The family encompasses about 6–11% of all seed plants. The largest genera are Bulbophyllum (2,000 species), Epidendrum (1,500 species), Dendrobium (1,400 species) and Pleurothallis (1,000 species).
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নামে দেশে রয়েছে নানা প্রতিষ্ঠানের নাম। বিদেশেও শেখ হাসিনার নামে নামকরণ করা হয়েছে একটি অর্কিডের নাম। তাঁর সম্মানে তাঁর নামে সিঙ্গাপুরের বিখ্যাত বোটানিক্যাল গার্ডেনের ন্যাশনাল অর্কিড গার্ডেনে একটি অর্কিডের নামকরণ করেছে দেশটির সরকার। অর্কিডটির নামকরণ করা হয়েছে ‘শেখ হাসিনা’।
বিগত ১৩ মার্চ ২০১৮ খ্রি. তারিখ মঙ্গলবার বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃত সিঙ্গাপুরের বিখ্যাত বোটানিক্যাল গার্ডেনের অর্কিড গার্ডেনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নিজেই অর্কিডটি উদ্বোধন করেন। অর্কিডটির নামকরণ করা হয়েছে Dendrobium Sheikh Hasina অর্থাৎ ‘ডেনড্রোবিয়াম শেখ হাসিনা। Dendrobium Sunplaza Park এবং Dendrobium Seletar Chocolat জাতের সংকর ঘটিয়ে নতুন এই প্রজাতির উদ্ভাবন করেছেন সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল অর্কিড গার্ডেন নার্সারীর ব্যবস্থাপক ডেভিড লিম। এই হাইব্রিড অর্কিডের গাছটি ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। প্রতিটি গাছে ১৫টি ফুলের থোকা ধরে। প্রতিটি প্রস্থে ৫ সেন্টিমিটার হয়। প্যাঁচানো প্রতিটি ফুলের গোড়া গাঢ় পিঙ্গল বর্ণের এবং ফুলের মাঝখানে হালকা বাদামী ও প্রান্ত হয় ধবধবে সাদা।
ডেভিড লিম জানান, অর্কিডটি সংকরায়ণ ও পত্র-পল্লবে বিকশিত হতে সাড়ে চার বছর সময় লেগেছে। সিঙ্গাপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের পরিচালক ড. নাইজেল টেইলর সি হর্ট অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে অর্কিডটি তুলে দেন। অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন:
আমি মনে করি এটা বাংলাদেশের জন্য বিশাল সম্মানের। এটা আমি বাংলাদেশের জনগণের জন্য উৎসর্গ করছি। এখানে আসতে পেরে আমি সত্যিই আনন্দিত। .. আমি চাই বাংলাদেশ এগিয়ে যাক। পুরো বিশ্বে বাংলাদেশ সুন্দর অবস্থানে আসুক। ফুল সৌন্দর্যের প্রতীক। ব্যবসা-আর সৌন্দর্য-ভালোবাসা নিবেদন সবক্ষেত্রেই ফুল ব্যবহার করা হয়।
ডেভিড লিম জানান যে, সিঙ্গাপুরের রীতি অনুসারে ১৯৫৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত সফরকারী বিভিন্ন দেশের প্রায় আড়াইশ রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের নামে স্থানীয় অর্কিডের নামকরণ করা হয়েছে। তাঁদের সফরকে স্মরণীয় করে রাখতেই এটা করা হয়। Dendrobium Sheikh Hasina অর্কিডটি তখন থেকে গার্ডেনের ভিআইপি গ্যালারির শোকেশে শোভা পাচ্ছে।
সিঙ্গাপুরে শেখ হাসিনার নামে অর্কিডের নামকরণের ধারাবাহিকতায় আমরা দেখতে পাই ফিলিস্তিনে একটি বাড়ির নামকরণ করা হয়েছে ‘শেখ হাসিনা’ নামে। অনলাইন পত্রিকা ‘পূর্বপশ্চিমবিডিডটনিউজ এর একটি প্রতিবেদনে আমরা জানতে পারি এ বিষয়ে। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে:
ফিলিস্তিনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে একটি বাড়ির নামকরণ করা হয়েছে। বাড়িটির নাম ‘শেখ হাসিনা’। বুধবার (১২ মে) এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত ইউসেফ এস ওয়াই রমজান। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাসকে লেখা প্রধানমন্ত্রীর চিঠি বুধবার ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূতকে পৌঁছে দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তখন রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে এ তথ্য দেন ।
ফিলিস্তিনে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নামে বাড়ির নামকরণের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ইউসেফ এস ওয়াই রমজান। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বলেন, ফিলিস্তিনের একটি বাড়ির নাম শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অব্যাহত সমর্থনের কারণে ফিলিস্তিনিরা তাকে অত্যন্ত ভালবাসে এবং শ্রদ্ধা করে। সেই শ্রদ্ধাবোধ থেকে বাড়ির নাম ‘শেখ হাসিনা’রাখা হয়েছে। ফিলিস্তিনে চলমান ইসরাইলি বিমান হামলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বেগ করেন। ইসরাইলের এই হামলার তীব্র নিন্দা জানান তিনি এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি অবিচল সমর্থন প্রকাশ করেন।
ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের কাছে পাঠানো চিঠিতে শেখ হাসিনা লিখেছেন, আমরা হামলায় হতাহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক এবং আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এই কাপুরোষচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের যে কোন দেশে এ ধরনের জঘন্যতম হামলার অবসানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে টেকসই পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় প্যালেস্টাইন বাংলাদেশের প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়েছিলো এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিলো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাই ফিলিস্তিনের সংগ্রামে সবসময়ই সমর্থন জানিয়েছেন এ বিষয়ে ইতিহাস থেকে জানা যায়:
১৯৭১ এ ফিলিস্তিনের পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল একটি নিবন্ধ যার শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশ- এ সেকেন্ড প্যালেস্টাইন’। আমরা জানি যুগ যুগ ধরে নির্যাতিত হয়ে আসা আজকের ফিলিস্তিনিরাই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেয়। সে সময়কার ফিলিস্তিনি গণমাধ্যমগুলোও সরব ছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে। সম্প্রতি ১৯৭১ সালের একটি ফিলিস্তিনি সংবাদপত্রের একটি ছবির খোঁজ পাওয়া গেছে। তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশের জন্যে ফিলিস্তিনিদের আকুতি। এমনকি বাংলাদেশকে তারা নিজেদের অবস্থার মত দেখছেন এমনটাই পাওয়া গেছে ওই সংবাদপত্রে। অথচ দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও স্বাধীন ভূখ-ের জন্য লড়তে হচ্ছে তাদের।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউরোপ থেকে বিতাড়িত হয়ে আরবে আশ্রয় নেওয়া ইসরায়েলই এক সময় ফিলিস্তিনের বিশাল অংশ জবরদখল করে ফিলিস্তিনিদেরই তাড়িয়ে দেয়। হত্যা, জুলুম, নির্যাতন চালায় নজিরবিহীনভাবে। হিটলারের গণহত্যার শিকার হওয়া জাতি নিজেই গণহত্যাকারীর রূপ নেয়। তখন মজলুম ফিলিস্তিনিরা বুঝতে পেরেছিল, একটা স্বাধীন ভূখ-ের কী জরুরি প্রয়োজন। সেই তাড়না থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্বের প্রতি সমর্থন জানায় তারা। পাকিস্তানি হানাদারদের চালানো গণহত্যাকে ইহুদি আগ্রাসনের সাথে তুলনা করে বলে, ‘বাংলাদেশ-এ সেকেন্ড প্যালেস্টাইন।’ পাকিস্তানিদের মুসলিম পরিচয় নয়, মজলুমের আর্তনাদই গুরুত্ব পেয়েছিল তখন। বাংলাদেশ স্বাধীন হলো, সেই স্বাধীনতাকে আরবের অনেকের আগে স্বীকৃতি দেয় ফিলিস্তিন। তখন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দিতে পাকিস্তানের চাপ ছিল আরব দেশগুলোর ওপর, সেখানে তৎপর ছিল পাকিস্তানপন্থী স্বাধীনতা বিরোধীরাও।
বঙ্গবন্ধুর চিরসংগ্রামী জীবন পৃথিবীর সকল সংগ্রামের প্রতি নিবেদিত ছিল। তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তাই পৃথিবীর সকল মুক্তিকামী জনগণের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সব সময়ই।
বঙ্গবন্ধু নামক একটি অমিত তেজময় সত্ত্বার সার্থক উত্তরাধিকার হচ্ছেন শেখ হাসিনা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন,‘শেখ হাসিনা বার বার বুলেট ও গ্রেনেডের মুখ থেকে বেঁচে ফেরা বহ্নিশিখা। তিনি তাঁর জীবন বাংলার মেহনতি দুঃখী মানুষের কল্যাণে উৎসর্গ করেছেন। রাজনীতির মাধ্যমে মানুষের কল্যাণই তাঁর রাজনীতির দর্শন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির জনকের হত্যার পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দলের দায়িত্ব নিয়ে দলকে শুধু ক্ষমতায়ই আনেননি, দেশকেও এগিয়ে নিয়েছেন অনেক দূর। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে যেমন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি উদার গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি তিনি। তাঁর দক্ষ নেতৃত্বে দেশ সবদিকে এগিয়ে গেছে।
দারিদ্র্য ও বঞ্চনার ইতিহাস অতিক্রম করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে ‘উন্নয়ন বিস্ময়’ বলে স্বীকৃত। বিগত ৪৯ বছরে বাংলাদেশকে অনেক বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। আজ বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দারিদ্র্যকে জয় করেছে বাংলাদেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ‘মধ্যম আয়ের দেশ’ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ‘উন্নত দেশ’ এ রূপান্তরের লক্ষ্যে সব উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন করা হচ্ছে। সীমিত সম্পদ আর অসীম চাহিদাকে মাথায় রেখে সামাজিক ন্যায় ও মানবিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যে উন্নয়ন-দর্শন গ্রহণ করা হয়েছে, তা সত্যিই দেশপ্রেম এবং মানব উন্নয়নের নিরিখে বিরল দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের সংবিধানের নীতি ও আদর্শ বাস্তবায়নের রূপরেখাই বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন দর্শন। এই উন্নয়ন দর্শন বিশিষ্ট কোনো একাডেমিশিয়ান বা একাডেমিক অর্থনীতিবিদ প্রণয়ন করেননি, প্রণয়ন করেছেন স্বদেশপ্রেম-স্মার্ত একজন রাষ্ট্রনায়ক-নাম তাঁর শেখ হাসিনা। নির্মোহ বিচারে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র দর্শনে তিনি একজন বিদূষী দার্শনিক।
উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে ‘শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শন’। তাঁর উন্নয়ন দর্শনের অনুষঙ্গ হিসেবে একটি জিনিসই পাওয়া যায়। তা হলো স্বদেশপ্রেম আর স্বদেশপ্রেম। শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ একাকার সত্ত্বায় অবিরাম অভিযাত্রী। বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনার জীবনের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সুনামির ঝড়ো হাওয়া এবং উজ্জ্বল সোনালী রবির আলোকচ্ছটা দুটো প্রত্যক্ষ করা যায়।
কোনো কোনো দেশ বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়ালে ষ্ট্রং লিডারশিপের প্রয়োজন বোধ করে। বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালের জাতীয় বিপর্যয়ের পরে এই শক্ত নেতৃত্বের অভাবে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। এই দুঃসময়ে নেতৃত্বের এই অভাব পূরণ করেছেন শেখ হাসিনা। ত্রিশ বছরের বেশি সময় ধরে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ার সাহস দেখিয়ে তিনি আজকের জাতীয় নেতার পর্যায়ে পৌঁছেছেন।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। তিনি একজন বিশ্বনন্দিত ষ্টেটসম্যান বা রাষ্ট্রনায়ক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিদ্বদ্ধী শেখ হাসিনা নিজেই।.. শেখ হাসিনা যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা। তা তিনি তাঁর কর্ম দ্বারা প্রমাণ করেছেন। সময়ের প্রেক্ষিতে বোদ্ধাগণ বলেন, সবকিছুর বিকল্প আছে, শেখ হাসিনার বিকল্প নেই। শহীদকন্যা ডা. নুজরাত চৌধুরী যথার্থই বলেছেন,‘ আমাদের জন্য আপনিই বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনা দৃঢ়চেতা অকুতোভয় এক সংশপ্তক। দক্ষিণ এশিয়ার একটি ছোট উন্নয়নশীল দেশের মানুষ হয়ে তিনি বিশ্বের পরাশক্তির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেছেন, বিশ্বব্যাংকের হুমকি মোকাবেলা করেছেন। রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা মোকাবেলায় সাহসী ভূমিকা পালন করে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছেন।
দেশের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অসম্ভব বলে কোন কথা নেই, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রায় শেষ পর্যায়ে এনে তিনি তা প্রমাণ করেছেন। ‘বঙ্গবন্ধু-আওয়ামী লীগ-বাংলাদেশ’ বাঙালির অভিধানে এই তিনটি শব্দই সমার্থক। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও নীতি নির্দেশনায় উজ্জীবিত হয়ে বাকি দুইয়ের চালিকা শক্তি হলেন মুজিবকন্যা বঙ্গরত্ন শেখ হাসিনা।
দেশপ্রেমের মহান ব্রত নিয়ে সব বাধা-বিপত্তি, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, নাশকতা মোকাবেলা করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দারিদ্র্য বিমোচন, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বৃদ্ধ ভাতা, বিধবা ভাতা, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঈর্ষণীয় সাফল্য, পায়রা সমুদ্র বন্ধর, রুপপুর পাওয়ার প্রজেক্ট, ২টি সমুদ্র সীমা মামলায় আন্তর্জাতিক আদালতে বিজয়, ভারতের সঙ্গে ভূমি বিরোধের পূর্ণ সমাধান, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে মানবিক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন, সীমান্তে সন্ত্রাসী কর্মকা- নির্মূলসহ নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রো রেল, ফ্লাইওভার, মহাসড়ক উন্নয়ন ও শথ শথ সেতু নির্মাণ, তা সবই আওয়ামী লীগ সরকারের ধারাবাহিকতা ও শেখ হাসিনার দৃঢ় বিশ্বাস ও দূরদর্শিতার ফসল।
এক সময়ের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ আর যুদ্ধবিধ্বস্ত দুর্যোগক্লিষ্ট ভঙ্গুর অর্থনীতির বাংলাদেশ আজ শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে অভাবনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিদেশী ষড়যন্ত্র, হাজারো বোধা-বিপত্তি আর নানা প্রতিকুলতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
শেখ হাসিনা তাঁর পিতার মতোই অসীম সাহসী, দৃঢ়তায় অবিচল, দেশপ্রেম ও মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন আদর্শবাদী নেতা। দেশের যে কোনো সংকটে তাঁর নেতৃত্ব দলমত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কাছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য। সেখানে দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নেই। আর তাই বাঙালির মহত্তম নেতা বঙ্গবন্ধু ও গৌরবের অর্জন মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারিত্বের একমাত্র বাতিঘর শেখ হাসিনা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সংগ্রামী জীবন বিশাল কর্মকান্ড ও সফলতায় ভরপুর। অসামান্য গৌরবে সিক্ত। দুঃখ-বেদনা, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, পাওয়া-না-পাওয়া, তৃপ্তি-অতৃপ্তি, আনন্দ-বেদনা-সব পেরিয়ে এক বিশাল ক্যানভাসের জীবন শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সিঙ্গাপুর সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সম্মানকে ‘বাংলাদেশ’ নামক রাষ্ট্রের জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছেন। আসুন আমরা শেখ হাসিনা নামক অনন্যসাধারণ অর্কিডের ৭৫তম জন্ম দিনে তাঁর স্বপ্নের ‘বাংলাদেশ’ নামক রাষ্ট্রের বিনির্মাণ পর্বে নিজেদের নিয়োজিত করে তাঁর প্রতি হৃদয়াঞ্জলি জানাই। জয়তু শেখ হাসিনা!!!
লেখক :
উপ-সচিব
ডাক ও টেলি যোগাযোগ বিভাগ, ঢাকা।

    ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com