বাঙালি সত্ত্বার এক অবিস্মরণীয় আলোকবর্তিকার নাম কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ ২২শে শ্রাবণ। এই বিশ্বকবির ৮০তম প্রয়াণ দিবস। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে তার জীবনাবসন ঘটে। বাঙালি সত্তার বাতিঘর তিনি। বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় তার অবদান অনস্বীকার্য।
বাঙালির মানসপটে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাঙালি জীবনের প্রতিটি পরতেই বিশেষ করে সাহিত্যে তিনি রয়েছেন মিশে। তাকে বাদ দিয়ে ভাবের প্রকাশ, সাহিত্যের রস-আস্বাদন, চিন্তার রেখা ফুটিয়ে তোলা অসম্ভব। বাঙালির জীবনে সদা জাগ্রত এক নাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাঙালির যতসব বৈচিত্র্যতা সবই রয়েছে তার গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, গান, স্মৃতিকথা ও দর্শনে। তার সাহিত্যকর্ম, সঙ্গীত, জীবনদর্শন, মানবতা— সবকিছুই সত্যিকারের বাঙালি হতে অনুপ্রেরণা জোগায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ। মা সারদাসুন্দরী দেবী এবং বাবা কোলকাতার বিখ্যাত জমিদার ও ব্রাহ্ম ধর্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৮৭৫ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাতৃবিয়োগ ঘটে। পিতাকেও তিনি খুব একটা কাছে পাননি। কারণ, ১৫ সন্তানের জনক ব্রাহ্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাৎসল্য প্রেম অতোটা প্রখর ছিল না। তিনি অধিকাংশ সময় থাকতেন গৃহের বাইরে। ১৪তম সন্তান হিসেবে যখন রবীন্দ্রনাথের জন্ম, ততদিনে দেবেন্দ্রনাথের গৃহের মায়া অনেকটা শিথিল হয়েছে। তাই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হয়েও রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা কেটেছে ভৃত্যদের অনুশাসনে।
শৈশবে কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নরম্যাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমি ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে পড়ালেখা করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির এই কনিষ্ঠ পুত্র (রবীন্দ্রনাথের পর বুধেন্দ্রনাথের জন্ম। কিন্তু তিনি ছিলেন স্বল্পায়ু। সেই হিসাবে রবীন্দ্রনাথকেই কনিষ্ঠ পুত্র বলা হয়)। এই মুক্ত বিহঙ্গজীবনই একদিন তাকে ঘরে থেকে বের করে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছিল। তিনি ভেতর থেকে বাইরে এসে সামনে দাঁড়িয়েছিলেন বলেই বুকের মধ্যে বিশ্বলোকের সাড়া পেয়েছিলেন।
কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার একটি গ্রাম শিলাইদহ। রবীন্দ্রনাথের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮০৭ সালে এ অঞ্চলের জমিদারি পান। পরবর্তিতে ১৮৮৯ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে জমিদার হয়ে আসেন। এখানে তিনি ১৯০১ সাল পর্যন্ত জমিদারী পরিচালনা করেন। এ সময় এখানে বসেই তিনি রচনা করেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী, গীতাঞ্জলি ইত্যাদি। এখানে রবীন্দ্রনাথের সাথে দেখা করতে এসেছেন জগদীশ চন্দ্র বসু, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, প্রমথ চৌধুরীসহ আরো অনেকে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখতে শুরু করেন ৮ বছর বয়সে। আটপৌরে বাঙালির মতো তার শুরুটা হয়েছিল কবিতা দিয়ে এবং একদিন সেই কবিতাই তাকে তুলে ধরে বিশ্ব দরবারে। তিনি হয়ে ওঠেন বিশ্বকবি।
উদীচী গৌরীপুর সংসদের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান রবীন্দ্রনাথের কর্মকে স্মরণ করে বলেন, বাঙালি জাতি যতোদিন টিকে থাকবে রবীন্দ্রনাথের কর্মকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। সাহিত্যের সবকয়টি শাখায় তার অবাধ বিচরণ বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে উঁচু করে রেখেছে।
ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com