ময়মনসিংহবৃহস্পতিবার , ১১ জুলাই ২০১৯

গৌরীপুরে এক বাড়িতেই ১১ জন বাক প্রতিবন্ধী !

আলম ফরাজী
জুলাই ১১, ২০১৯ ৮:২৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে বাড়ির নাম হয়ে গেছে ‘আব্রাদের বাড়ি’। সেই বাড়িতে নারীপুরুষ, শিশুবৃদ্ধসহ ৩০ জনের মতো বাসিন্দা বসবাস করেন। সেই বাড়ির ১১ জন বাসিন্দাই বাক প্রতিবন্ধী।

বাড়িটি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সহনাটি ইউনিয়নের পলটিপাড়া গ্রামে অবস্থিত। বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধকতার শিকার বাড়ির বাসিন্দাদের সাথে কথা বলার জন্য এ প্রতিবেদককে সহায়তা করেন পাশের বাড়ির গৃহবধূ জেসমিন নাহার (৩৫)।

জেসমিন বলেন, তিনি এখানে বধূ হিসেবে আসার পর থেকে এই বাড়ি বাসিন্দাদের সাথে ইশারা ভাষায় কথা বলতে গিয়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তিনি তাঁদের সুখ-দুঃখের কথা বুঝতে পারেন। তাঁর ইশারাও বাকপ্রতিবন্ধীরা বুঝতে পারেন।

জেসমিন বলেন, এই বাড়ির তিন মেয়ে হচ্ছেন চান বানু (৬৫), তাহের বানু (৫৫) ও জাহের বানু (৪৫)। তাঁরা তিনজনই বাকপ্রতিবন্ধী। চান বানুর দুই সন্তান হচ্ছেন মো. আবদুল মালেক (৩৩) ও আবদুল খালেক (৩৬)। তাঁরা দুজনই বাকপ্রতিবন্ধী। তাহের বানুর এক সন্তান সুস্থ ও স্বাভাবিক। জাহের বানু নিঃসন্তান। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তাঁদের কেউ কাজে নেয় না। ফলে তাঁরা ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এই নারীদের বিয়ে হলেও শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতার কারণে বেশিদিন স্বামীর ঘর করার সৌভাগ্য হয়নি। স্বামীরা তাদেরকে বাবার বাড়িতে ফেলে রেখে গেছে। ফলে ভাইদের আশ্রয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁদেরকে।

এদিকে চান বানু ছেলে আবদুল মালেকের তিন সন্তানের মধ্যে আবার দুজনই বাকপ্রতিবন্ধী। আরেক ছেলে আবদুল খালেকের তিন সন্তানের মধ্যে একজন বাকপ্রতিবন্ধী। প্রতিবেশী গৃহবধূর মাধ্যমে কথা বলে জানা যায়, অন্যের জমিতে মজুর খেটে সংসার চলে তাঁদের। তাদের বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে শ্রবণ সমস্যা। কেউ কাজে নিলেও ডেকে তাঁদের সাড়া পান না। ছোট কিছু দিয়ে শরীরে ঢিল ছুঁড়ে দিয়ে সাড়া পেতে হয়।

ওই বাড়ির দুই ছেলে (চান বানুদের ভাই) হচ্ছেন, মো. মেরাজ মিয়া (৬৫) ও আবদুস সাত্তার (৫৫)। তাঁরা দুজনও বাকপ্রতিবন্ধী। মেরাজ মিয়া বিয়ে করলেও বাকপ্রতিবন্ধকতার কারণে স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলে যায়। আবুদস সাত্তারের এক সন্তানও বাকপ্রতিবন্ধী।
উল্লিখিত ১১ জন বাতপ্রতিবন্ধীর মধ্যে কেবল আবদুস সাত্তার সরকারের প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। তবে সাত্তারের এক বছরের (জুলাই ১৫ ইং থেকে জুন ১৬ ইং) ভাতা সহনাটি ইউনিয়নের একজন জনপ্রতিনিধি আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ প্রতিবেদক যখন তাঁদের (প্রতিবন্ধী) তথ্য সংগ্রহ করছিলেন তখন বাকপ্রতিবন্ধীরা ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। ক্ষোভের কারণ জানতে চাইলে দোভাষীর দায়িত্ব পালনকারী গৃহবধূ জেসমিন বলেন, অর্থ আত্মসাত ও সহনাটি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে একাধিকবার বাকপ্রতিবন্ধীদের তথ্য সংগ্রহ ও ছবি তুলে নিলেও সরকারি কোনো ভাতা না পাওয়ার কারণে এ প্রতিবেদককে ইউপির লোক মনে করে ক্ষোভ দেখান তাঁরা। পরে বুঝিয়ে বললে তাঁরা শান্ত হন।

বাড়ির অন্য বাসিন্দারা বলেন, আমাদের বাড়িতে নলকুপ নেই। পানীয় জলের তীব্র সংকট। বাড়িতে স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার নেই। বসতঘর ভেঙে পড়ছে। হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য হলেও দালালকে টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ পেতে হয়েছে। প্রতিবেশী মো. ইসলাম উদ্দিন ও আবদুর রশিদ বলেন, টেলিভিশনে দেখি সরকার হতদরিদ্রদের এত সাহায্য-সহযোগীতা করছে। তাহলে গৌরীপুরের পলটি পাড়ার এই বাড়ির ১০ জন বাকপ্রতিবন্ধী বাসিন্দা কেন সরকারের প্রদত্ত সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আপনারা (সাংবাদিক) দূর থেকে বাড়িতে এসে খোঁজ নিচ্ছেন। কিন্তু সরকারের লোকজন কেন খোঁজ নিতে আসেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সহনাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মুঠোফোে বলেন, আমার কাছে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডই আসে কম। তাই সারা ইউনিয়নের প্রতিবন্ধীর সংখ্যা মাথায় রেখে বিতরণের কাজটি করতে হয়। সুযোগ পেলে ওই বাড়িতে সরকারি ভাতার একাধিক কার্ড দেবেন বলে জানান। আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, দেখি ওই বাড়িতে একটি নলকুপ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি কিনা।

    ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com