ময়মনসিংহরবিবার , ২০ জুন ২০২১

‘খারাপ কোনো রিপোর্ট করিয়েন না’: মাটি ও রাবিস ইট দিয়ে সড়ক নির্মাণ

উপজেলা প্রতিনিধি
জুন ২০, ২০২১ ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার আলোকদিয়া-ধারাম সড়কের নির্মাণকাজে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
ভাটায় যেসব ইট বিক্রির অনুপযোগী, সেসব রাবিস অর্থাৎ নিম্নমানের ইট সড়কে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সড়কে বিট বালুর পরিবর্তে মাটি দিয়ে কোনো রকম দায়সারা ভাবে কাজ করা হচ্ছে।

এমন অভিযোগ তুলে ‘নেত্রকোনা পরিবার’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে নির্মাণ কাজের কয়েকটি ছবি ও ভিডিও পোস্ট করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় ফাহিম খান নামে এক যুবক। মুহূর্তে তার পোস্ট ভাইরাল হয়ে পড়ে। শুরু হয় সমালোচনার ঝড়।

জানা গেছে, উপজেলার আলোকদিয়া থেকে ধারাম গ্রামের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তাটির পিচ ঢালাই করার বরাদ্দ ধরা হয় এক কোটি ৮০ লাখ টাকা। কাজটি পান নেত্রকোনার বাসিন্দা ঠিকাদার এস এম আঙ্গুর হোসেন। রাস্তার কিছু অংশ সিসি ব্লক দিয়ে বাঁধাই করার কথা রয়েছে। শর্তানুযায়ী, এ বছরের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। ঠিকাদার এস এম আঙ্গুর হোসেন এ কাজটি করছেন না। সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজটি করছেন স্থানীয় বাবলু মিয়া নামে এক ব্যক্তি। তারই হয়ে সাইট দেখাশোনা করেন তার ভাগ্নে দিলু মিয়া।

স্থানীয়রা জানায়, প্রকৌশল বিভাগের তদারকির অভাবে শ্রমিকেরা ইচ্ছামতো নিম্নমানের ইট রোলার মেশিন দিয়ে মিশিয়ে সড়কে দিচ্ছেন।

ধারাম গ্রামের মাহবুবুর রহমান, মান্নান মিয়া ও মো. রুমন মিয়া জানান, ভাটায় যেসব ইট বিক্রির অনুপযোগী, সেসব নিম্নমানের শ্রেণির ইটের খোয়া সড়কে ব্যবহার করা হচ্ছে। বালুর পরিবর্তে দেয়া হচ্ছে মাটি। প্রতিবাদ করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ঠিকাদার কারো কথা শুনছে না। সবকিছু দ্রুত করে ফেলছেন। এ রাস্তা ছয় মাসও ঠিকবে না বলে জানান তারা।

ধারাম গ্রামের বাসিন্দা বৃদ্ধ রোজালী মিয়া বলেন, প্রথমে মাটি দিয়ে তার ওপর কিছু রাবিস ঢেলেছে। এলাকাবাসীর প্রতিবাদের পর দ্রুত এসবের ওপর নিম্নমানের ইটের খোয়া দিয়ে এখন রোলার মেশিন দিয়ে সড়কে মিশিয়ে দিচ্ছেন। এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল এ রাস্তাটি পাকা হবে। সেই আশায় কত কষ্ট করেই এখান দিয়ে চলাফেরা করেছে। শেষে রাস্তা তো পাকা হচ্ছেই। কিন্তু ঠিকাদার আর সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের অতি লোভের ফলে এ রাস্তা বেশিদিন ঠিকবে না।

সাব ঠিকাদার বাবলু মিয়ার পক্ষে রাস্তা নির্মাণের ওই কাজটি করছেন তারই ভাগ্নে দিলু মিয়া। তিনি বলেন, ভুলে কিছু খোয়া নিম্নমানের চলে আসছিল। সেগুলো রাস্তা থেকে তুলে পাশে জমা করে রেখেছি। রাস্তায় থাকা রাবিস’কে ভালো মানের ইটের খোয়া দাবি করে তিনি বলেন, ‘খারাপ কোনো রিপোর্ট করিয়েন না। ভালো একটা রিপোর্ট করিয়েন।’

সাব ঠিকাদার বাবলু মিয়া বলেন, প্রতিবাদ আসায় নিম্নমানের খোয়াগুলো সরিয়ে ফেলেছি। বর্তমানে ভালো খোয়া দিয়েই কাজ করছি। দ্রুত কাজ করছি, জুন মাসেই কাজ শেষ করতে হবে। সে কারণে সিসি ব্লক বসানো সম্ভব নয়। ফলে প্রায় ৩০ লাখ টাকা বিল কম নিতে হবে।

এলজিইডি’র বারহাট্টা উপজেলা প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, অভিযোগ আসায় নিম্নমানের খোয়াগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। আমার অফিসে স্টাফ সংকট থাকায় তদারকি করতে বেগ পোহাতে হচ্ছে। তারপরও ২০-২৫ দিন ওই রাস্তাটি দেখতে গিয়েছি।

এই রাস্তা তো পুরোটা সমতল ব্লক বসানোর মতো কোনো জায়গা নেই। তাহলে ব্লকের বরাদ্দ এলো কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিসি ব্লক আপাতত বসানো হবে না। কারণ রাস্তাটি অন্যদিক দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। ওই রাস্তার জন্য ব্লক ধরা ছিল। পরে বিভিন্ন কারণে রাস্তার দিক বদল হওয়ায় এখন আর ব্লক লাগছে না। জুন মাসের মধ্যে দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে। ‌

নেত্রকোনা জেলা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ কুমার কুন্ডু বলেন, নিয়মিত ওই রাস্তা পরিদর্শনে লোক পাঠাচ্ছি এমন তো হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

    ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com