ময়মনসিংহশনিবার , ১৮ জুলাই ২০২০
আজকের সর্বশেষ সবখবর

গৌরীপুরে বিদ্যুতের কন্ট্রোল রুমে শ্রমিক অগ্নিদগ্ধ

আরিফ আহম্মেদ
জুলাই ১৮, ২০২০ ৫:১০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ ছাড়া একটা মূহুর্ত চলে না আমাদের। আর সেই বিদ্যুৎ সরবরাহ যারা নিরবিচ্ছিন্ন চালু রাখতে সর্বাত্বক চেষ্টা চালিয়ে যান, সেই বিদ্যুৎ কর্মীদের জীবনের নেই কোন নিশ্চয়তা। তারচেয়েও অমানবিক হচ্ছে দিনরাত মইঠেলে যারা কাজ করেন তারা পান না কোন সরকারি বেতন-ভাতা, এমনকি স্থানীয় কার্যালয় থেকেও দেওয়া হয় না তেমন কোন পারিশ্রমিক। গ্রাহকের দেওয়া সামান্য বকশিসই তাদের জীবীকা! অথচ তাদের দিয়ে করানো হয় নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। ভবিষ্যতে নিয়োগের আশায় এসব কর্মীরা কোন রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। তবে এসব কর্মীদের মাঝে সবাই নিয়োগ নামের সোনার হরিণের দেখা পান না। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু জীবন-যাপন করছেন।

সর্বশেষ গত শুক্রবার (১৭ জুলাই) দুপুরে গৌরীপুর পিডিবি’র কার্যালয়ে কন্ট্রোল রুমে রক্ষণাবেক্ষন কাজ চলাকালীন সময় শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকান্ডে বিদ্যুৎ কর্মী হাবিবুর রহমান হবি গুরুতর আহত হয়েছেন। তার শরীরের ৪৫% শতাংশ পুড়ে গিয়েছে বলে জানা যায়। এসময় হবিকে উদ্ধার করতে গিয়ে আবাসিক প্রকৌশলী নিরঞ্জন কুন্ডুও আহত হন৷ গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হবিকে প্রথমে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে৷ বর্তমানে তিনি ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন। তার হাতে একটি অপারেশন করতে হবে। আহত আবাসিক প্রকৌশলী ডাক্তারের পরামর্শে নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এক তথ্যে জানাযায়- ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ লাইনে কাজ করতে গিয়ে মো: ইমতিয়াজ আহাম্মদ লিটন বিদ্যুত তাড়িত হয়ে নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন, দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর বর্তমানে তিনি কিছুটা সুস্থ্য রয়েছেন।
২০১২ সালে মো: আশরাফুল ইসলাম রোবেল সরকারি কলেজ রোডে ট্রান্সমিটারে কাজ করতে গিয়ে বিদ্যুৎ তাড়িত হয়ে গুরুতর আহত হন। জীবন বাঁচলেও এখন হুইল চেয়ারে বসে পঙ্গু জীবনের যাতনা ভোগ করছেন। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে পাননি কোন আর্থিক সহযোগিতা, অসহায়ভাবে জীবন-যাপন করছেন এখন। এরপূর্বে তিনি আরো ৫ বার বিদ্যুৎ তাড়িত হয়েছিলেন বলে জানান। রোবেল নিয়োগের আশায় ১৪ বছর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত কাজ করেছেন, অবশেষে পাননি কিছুই। আহত হবি আবারো বিদ্যুতের কর্মব্যস্ত জীবনে ফিরে আসতে পারবেন কিনা তা এখনো অনিশ্চিত।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন গৌরীপুর উপজেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেন- প্রতিবছর বিদ্যুৎখাতে সরকার শত শত কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। সিস্টেম লস দেখিয়ে কিছু কিছু কর্মকর্তা কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে! অথচ রোডলেবেল পর্যায়ে যারা কাজ করছে তাদের নিম্নতম পারিশ্রমিকও দেওয়া হচ্ছে না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা মানুষের জীবনকে সচল রাখছে, উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখছে সরকারের উচিত তাদের জন্য নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক ও ঝুঁকিভাতার ব্যবস্থা করা।
গৌরীপুর আবাসিক প্রকৌশলী নিরঞ্জন কুন্ডু জানান- হবি আমাদের প্রকৌশল বিভোগের কোন কর্মী নয়। এব্যাপারে তার কোন প্রশিক্ষণও নাই। স¤প্রতি তাকে মিটার পাঠক হিসাবে চুক্তিভিত্তিক দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তাছাড়া সে দৈনিক মুজুরীতে অফিসের বিভিন্ন কাজ করে থাকে। ঘটনার দিন কন্ট্রোল রুমে ময়মনসিংহ থেকে আসা প্রকৌশলীদের ডিজেল সাফলাই ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে সহযোগিতার জন্য তাকে মুজুরির ভিত্তিতে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সে পরিষ্কার করতে করতে কখন মেশিনের ভিতর প্রবেশ করেছে তা কেউ খেয়াল করেনি, তখন সে বিদ্যুৎ তাড়িত হয়।

তিনি আরো জানান- এসময় আগুন ও ধোয়া দেখে সবাই দৌড়ে পালালেও আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হবিকে মেশিনের ভিতর থেকে টেনে বের করি ও দ্রæত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ ও পরবর্তীতে ঢাকা পাঠাই।
আগুনের ধোঁয়া নাকে-মুখে প্রবেশ করায় এখন তিনি শ্বাসকষ্টে ভোগছেন। তাছাড়া হবির চিকিৎসার জন্য সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছেন বলে তিনি।

    ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com