ময়মনসিংহরবিবার , ১ নভেম্বর ২০২০
আজকের সর্বশেষ সবখবর

‘ছাপার ভুলে’ আ.লীগ নেতাকে ডাকাত সম্বোধন, ৪ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা

জেলা প্রতিনিধি
নভেম্বর ১, ২০২০ ১১:৫৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের জের ধরে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়ছে। শনিবার (৩১ অক্টোবর) রায়পুর পৌরসভার মেয়র ও উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল খোকন এই মামলা করেন।

মামলায় লক্ষ্মীপুর থেকে প্রকাশিত দৈনিক বাংলার মুকুল পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক একেএম মিজানুর রহমান মুকুল, নির্বাহী সম্পাদক আফরোজা আক্তার রাঙা, মোহনা টিভির রায়পুর প্রতিনিধি এস এন উদ্দিন রিয়াদ ও এশিয়ান টিভির রায়পুর প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম টিটুকে আসামি করা হয়।

রায়পুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল জলিল মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘পৌর মেয়র ইসমাইল খোকন বাদী হয়ে থানায় চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলাটির তদন্ত চলছে।’

জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর বাংলার মুকুল পত্রিকায় ‘রায়পুরে ডাকাতিয়া নদী এখন খোকন ডাকাতের কবলে’ শিরোনাম সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রায়পুর পৌর মেয়র মো. ইসমাইল খোকন চার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এই মামলা করেন।

এই ব্যাপারে বাংলার মুকুল পত্রিকার সম্পাদক একেএম মিজানুর রহমান বলেন, ‘সংবাদে ভুলে ডাকাত শব্দটি প্রিন্ট হয়েছে। সে কারণে পরদিন ২৯ অক্টোবর পত্রিকার অনলাইন ও প্রিন্ট সংস্করণে সংশোধনী দেওয়া হয়। এতে আমরা দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চেয়েছি। তারপরও মামলা করা হয়েছে। এটা ষড়যন্ত্র ও উদ্দেশ্যমূলক। এটি আমরা আইনিভাবে মোকাবেলা করবো।’

এদিকে চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়েরের ঘটনায় লক্ষ্মীপুর এবং রায়পুরে কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সাংবাদিকেরা। অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, মেয়র ইসমাইল খোকন রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পেশায় ব্যবসায়ী। গত ২৮ অক্টোবর দৈনিক বাংলার মুকুল পত্রিকায় ‘রায়পুর ডাকাতিয়া নদী এখন খোকন ডাকাতের দখলে’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।

এতে রায়পুর মহিলা কলেজ থেকে জমাদার বাড়ি সাঁকো পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার নদী দখলে নেন খোকন। তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে নৌকায় বসাতো মদের আসর। গত রোববার খোকন রাতের আঁধারে মাতাল অবস্থায় জাল কেটে দেয়াসহ বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করা হয়। পরে ওই পত্রিকার প্রিন্ট কপি মামলার আসামিরা নিজেদের ফেসবুকে পোস্ট ও শেয়ার করেন।

এতে আরো উল্লেখ করা হয়, রায়পুর ডাকাতিয়া একটি প্রবাহমান নদী ছিল। প্রায় ৩৫-৪০ বছর আগে এ নদী থেকে একটি সংযোগ ক্যানেল সোলাখালী পর্যন্ত নতুন নদী কাটা হয়। এতে রায়পুর বাজার সংলগ্ন ডাকাতিয়া নদীটি অকার্যকর হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে নদীর মাঝ বরাবর বাঁধ দিয়ে রায়পুর-হায়দরগঞ্জ সড়ক নির্মাণ করা হয়। এতে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে মৃত নদীতে পরিণত হয়।

তখন ডাকাতিয়া নদীর দু’পাশে বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়। বাঁধের দক্ষিণ পাশে মানিক নামে এক ব্যক্তি লিজ নিয়ে মাছ চাষ করেন। এতে জলাবদ্ধ ভূমি আবর্জনা, ডেঙ্গু মশাসহ পরিবেশ দূষণ থেকে রক্ষা পেয়েছে। উত্তর পাশে মাছ চাষের জন্য কোনো লোক না থাকায় ওই স্থানটি পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। কিন্তু অভিযুক্তরা সংবাদটিতে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন ও ফেসবুকে শেয়ার করে মেয়র খোকনের মানহানি করা হয়েছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনায় সুবিচার চেয়ে মেয়র খোকন বাদী হয়ে ওই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন।

    ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com