ময়মনসিংহশনিবার , ১৮ মে ২০১৯

পরিচিতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য – আমার প্রিয় ময়মনসিংহ

আমার প্রিয় ময়মনসিংহ নিয়ে হঠাৎ লিখতে বসলাম। শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের সূতিকাগার বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা ১৭৮৭ সালের ১মে জেলা হিসেবে জন্মের পর বর্তমান ময়মনসিংহের আদল পায় ১৯৮৪ সালে। উত্তরে গারো পাহাড় ও ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে গাজীপুর জেলা, পূর্বে নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে শেরপুর, জামালপুর ও টাঙ্গাইল জেলা বেষ্টিত ময়মনসিংহ জেলার ভৌগোলিক পরিবেশ বিচিত্র হওয়ায় বলা হয়। হাওর, জঙ্গল, মইষের শিং-এ নিয়ে ময়মনসিং। ৪,৭৮৭ বর্গমাইলের রত্নগর্ভা এ জেলার প্রাণবন্ত মানুষের পরিচয় পাওয়া যায় এর নামের মাঝেই- My-men-sing অর্থাৎ আমার লোকেরা গান গায়। মহুয়া-মলুয়ার দেশ ময়মনসিংহের পূর্ব নাম ছিল নাসিরাবাদ। মোঘল আমলে মোমেনশাহ নামে একজন সাধকের নামে অঞ্চলটির নাম হয় মোমেনশাহী- কালের বিবর্তনে যা ময়মনসিংহ নামে পরিচিতি লাভ করে। ময়মনসিংহ শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। এ নদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন বহু ছবি এঁকেছিলেন। এখানকার বহু স্থাপনায় প্রাচীন নির্মাণ শৈলীর ছোঁয়া রয়েছে। আছে কালের সাক্ষী স্বরূপ ভগ্ন জমিদার বাড়ী। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিও জড়িয়ে আছে এ জেলার ত্রিশাল উপজেলার সাথে। সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ আর বৈচিত্র্যপূর্ণ ময়মনসিংহের জনগোষ্ঠি।

ময়মন্সিংহের আয়তন ৪৩৬৩.৪৮ বর্গ কিলোমিটার। এটি ১২টি উপজেলা, ১৩টি থানা, ১০টি পৌরসভা (১টি ক শ্রেণীর, ৭টি খ শ্রেণীর, ২টি গ শ্রেণীর), ১৪৬টি ইউনিয়ন, ২২০১টি মৌজা, ২৭০৯টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। উপজেলাসমূহের নাম- ঈশ্বরগঞ্জ, গফরগাঁও, গৌরীপুর, ত্রিশাল, ধোবাউড়া, নান্দাইল, ফুলপুর, ফুলবাড়ীয়া, ভালুকা, ময়মনসিংহ সদর, মুক্তাগাছা, হালুয়াঘাট

ময়মনসিংহের ইতিহাস অতিশয় সমৃদ্ধ। উত্তরে গারো পাহাড়, দক্ষিনে ভাওয়াল মধুপুরের বনাঞ্চল, পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে উৎসারিত মেঘনার জল বেষ্টনী এবং পূর্বে সোমেশ্বরী তিতাস, সুরমা ও মেঘনা নদীর অববাহিকা অঞ্চল, প্রাকৃতিক প্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত এই অঞ্চলকে বরাবরই একটি দুর্জেয় অঞ্চল হিসেবে দেখতে পাওয়া যেত। আধুনিক ঐতিহাসিকগণ একমত পোষণ করেন যে, বৃহত্তর ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলা নিয়ে গঠিত ছিল প্রাচীন বংগরাজ্য। গোড়ার দিকে ময়মনসিংহ জেলার মধুপুর গড়সহ লালমাটির অঞ্চল নিয়ে গঠিত ছিল প্রাচীন বংগরাজ্য। হিন্দু রাজাগণের মৌর্য শাসন এর প্রতিষ্ঠা ও পরবর্তী সময় গুপ্ত ও পাল শাসকদের ইতিহাস ময়মনসিংহকে ঘিরে রেখেছে। শেষের দিকে সেন বংশীয় রাজাদের প্রশাসনিক দৌর্বল্যে মুসলমান বাদশাহগণ বাংলায় রাজত্ব কায়েমের প্রভাব ময়মনসিংহেও পড়ে। সিকান্দর শাহ-এর আমল থেকে মোঘল সাম্রাজ্য পেরিয়ে নবাবী আমল, কোম্পানী আমল এবং শেষে পাকিস্তানি শাসন-শোষণে ময়মনসিংহও প্রভাবান্বিত হয়। বিভিন্ন সূত্রে ময়মনসিংহ অঞ্চলে ৩৯টি পরগনার নাম পাওয়া যায়- ময়মনসিংহ, আলাপসিংহ, জাফরশাহী, বনভাওয়াল, পুথুরিয়া, কাগমারী, আন্টীয়া, বড় বাজু, সেরপুর, হাজবাদি, খালিয়াজুরী, জয়নশাহী, কুড়ি খাই, নছরৎশাহী, লতিফপুর, মকিমাবাদ, আটগাও, বলরামপুর, বরিকান্দি, বাউ খন্দ, চন্দ্রপ্রতাপ, ঈদগা, ইছকাবাদ, বায় দোম, সিংধা দরজিবাজ, কাসেমপুর, নিক্লী, সাসরদি, হাউলী, জকুজিয়াল, ইছাপুর, বরদাখতি, পাতিলা দহ, তুলন্দর, ইছপসাহী, হোসেন শাহী, হোসেনপুর, সুসঙ্গ ও নাসিরুর্জিয়াল।

জেলার নাম ময়মনসিংহ নিয়ে ইতিহাসবিদদের মাঝে ভিন্ন মত প্রচলিত আছে। আর ষোড়শ শতাব্দীতে বাংলার স্বাধীন সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তাঁর পুত্র সৈয়দ নাসির উদ্দিন নসরত শাহ’র জন্য এ অঞ্চলে একটি নতুন রাজ্য গঠন করেছিলেন, সেই থেকেই নসরতশাহী বা নাসিরাবাদ নামের সৃষ্টি। সলিম যুগের উৎস হিসেবে নাসিরাবাদ, নামটিও আজও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কোথাও উল্লেখ করা হচ্ছে না। ১৭৭৯-তে প্রকাশিত রেনেল এর ম্যাপে মোমেসিং নামটি বর্তমান ’ময়মনসিংহ’ অঞ্চলকেই নির্দেশ করে। তার আগে আইন-ই-আকবরীতে ‘মিহমানশাহী’ এবং ‘মনমনিসিংহ’ সরকার বাজুহার পরগনা হিসাবে লিখিত আছে; যা বর্তমান ময়মনসিংহকেই ধরা যায়। এসব বিবেচনায় বলা যায় সম্রাট আকবরের রাজত্ব কালের পূর্ব থেকেই ময়মনসিংহ নামটি প্রচলিত ছিলো। জেলা পত্তন কালে ময়মনসিংহ অঞ্চলের সমৃদ্ধ জমিদারগণ সরকারের কাছে জেলার নাম ময়মনসিংহ রাখার আবেদন করলে সরকার তা গ্রহণ করে নেন।

ময়মনসিংহ নামের বিস্তীর্ণ এ জনপদ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্রের লীলাভূমি। এককালে ভারতবর্ষের সর্ববৃহৎ জেলা হিসেবে খ্যাত ময়মনসিংহ পরবর্তীতে প্রশাসনিক প্রয়োজনে বেশ কিছুটা ছোট হয়ে আসে। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে টাঙ্গাইল জেলা পৃথক জেলার স্বীকৃতি পাবার পরও ময়মনসিংহ ছিল পাক-ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা। ময়মনসিংহের ভূ-প্রকৃতিতে একদিকে নেত্রকোনা-কিশোরগঞ্জের বিস্তীর্ণ জলাভূমি-হাওর অঞ্চল, মধুপুর ও ভাওয়ালের বিশাল বনাঞ্চল, ময়মনসিংহ-জামালপুরের সমতল অঞ্চল, শেরপুর-ময়মনসিংহের পাহাড়ি অঞ্চল, টাঙ্গাইলের বিস্তীর্ণ বিলাঞ্চল সহ উর্বর ভূমি- এ জনপদকে দিয়েছে বৈচিত্রের সমাহার। ভূ-প্রকৃতির বৈচিত্রের কারণে এ অঞ্চলের মানুষের সামাজিক জীবন, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, জীবিকা এবং সংস্কৃতি বৈচিত্রপূর্ণ। টাঙ্গাইলের পর পর্যায়ক্রমে জামালপুর (শেরপুরসহ), কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা পৃথক জেলার মর্যাদা পাবার পরও আয়তনের দিক থেকে বর্তমান ময়মনসিংহ জেলা বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে অন্যতম। এ জেলার উর্বর ভূমি ধান, পাট, সবজি ও রবিশস্য উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী।

জেলার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জেলাকে দিয়েছে শিক্ষা নগরীর মর্যাদা। দেশের একমাত্র মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়, ন্যাশনাল একাডেমী ফর প্রাইমারী এডুকেশন, প্রথম গার্লস ক্যাডেট কলেজ এবং কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় এ জেলায় অবস্থিত। এশিয়ার বৃহত্তম- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ সদরে স্থাপিত। যেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ছাত্রছাত্রীরা কৃষি ক্ষেত্রে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য আসেন। আণবিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এবং মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ময়মনসিংহ সদরেই স্থাপিত। ময়মনসিংহ দেশের প্রাচীনতম শহরগুলোর অন্যতম। এখানে অসংখ্য প্রাচীন স্থাপত্য, পুকুর-দীঘি রয়েছে। জেলা সদরের বুক চিড়ে বয়ে গেছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ। বৃটিশ বিরোধী বিভিন্ন আন্দোলন, পাগলপন্থী বিদ্রোহ, ফকির বিদ্রোহ, টংক আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, ৬৯-এর গণ আন্দোলন, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধসহ গণতান্ত্রিক প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে এ অঞ্চলের সাহসী মানুষের উল্লেখযোগ্য ভূমিকার স্বীকৃতি রয়েছে ইতিহাসের পাতায়। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে জলছত্র-মধুপুর, ভালুকা, ফাতেমা নগর (কালির বাজার)-এর প্রতিরোধ যুদ্ধ যেমন গুরুত্বপূর্ণ একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ তেলিখালির যুদ্ধ এবং ধানুয়া কামালপুরের যুদ্ধও।

মোট জনসংখ্যা ৪৪,৮৯,৭২৬ জন (২০০১ সনের আদমশুমারী অনুযায়ী), পুরুষ ২২,৯৭,৩০২ জন, মহিলা ২১,৯২,৪২৪ জন, মোট খানার সংখ্যা ৯,৬৫,১৫৫টি। মুসলিম ৯৪.৭৩%, হিন্দু ৪.২৫%, খ্রিস্টান ০.৭৫%, বৌদ্ধ ০.০৬%, অন্যান্য ০.২১%। বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.২৭%; বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অনুযায়ী ২০১০ সালের অনুমিত জনসংখ্যা ৫০ লক্ষ।

নদ-নদীর সংখ্যা ২২টি, আয়তন ১১৪৪৫.২০ হেক্টর। নদীর নাম- ব্রহ্মপুত্র, সুতিয়া, ক্ষিরু, সাচালিয়া, পাগারিয়া, নাগেশ্বর, কাচাঁমাটিয়া, আয়মন, বানার, নরসুন্দা, বোরাঘাট, দর্শনা, রামখালী, বৈলারি, নিতাই, কংশ, ঘুঘুটিয়া, সাতারখালী, আকালিয়া, জলবুরুঙ্গা, চৌকা মরানদী, রাংসা নদী ইত্যাদি। বিল ও প্রধান প্লাবনভূমির সংখ্যা ১১৪০টি, আয়তন ৩০৭৬২.০০ হেক্টর। বনভূমি ৩৮৮৬০.৭৩ একর। বালু মহল ১৫টি, আয়তন ৮৭৪.৫০ একর। সাদামাটি মহল ১টি, আয়তন ২৪.৩৩ একর ইত্যাদি।

জেলার শিক্ষার হার ৩৯.১০% (পুরুষ ৪১.০৯%, মহিলা ৩৬.০৩%)। প্রাথমিক বিদ্যালয় মোট ২৬৮৯টি (তন্মধ্যে সরকারী ১২৪৯টি, বেসরকারী রেজিষ্টার্ড ৬২১টি, আন রেজিষ্টার্ড ২৭টি, উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন ৫৬টি, কিন্ডার গার্ডেন ১২৬টি, পরীক্ষণ ১টি, স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা ২৩৪টি, উচ্চ মাদ্রাসা সংলগ্ন ২৪৩টি, কমিউনিটি ১১৪টি, এনজিও ১৮টি)। নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১০৫টি, ৯ম শ্রেণীর অনুমতি প্রাপ্ত বিদ্যালয় ৭২টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪০৪টি, স্কুল এন্ড কলেজ ১৩টি, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩১টি, ডিগ্রী কলেজ ২৭টি (সরকারী ৩টি, বেসরকারী ২৪টি), বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ২টি (সরকারী), বিশ্ববিদ্যালয় ২টি (সরকারী), মেডিক্যাল কলেজ ২টি (সরকারী ১টি, বেসরকারী ১টি), ক্যাডেট কলেজ ১টি, চারুকলা ইনষ্টিটিউট ১টি, হোমিওপ্যাথিক কলেজ ১টি, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ১টি, কারিগরী মহাবিদ্যালয় ১টি, ভোকেশনাল ইনষ্টিটিউট ২টি, শারীরিক শিক্ষা মহাবিদ্যালয় ১টি, কামিল মাদ্রাসা ৪টি, ফাযিল মাদ্রাসা ৪৭টি, আলিম মাদ্রাসা ৪২টি, দাখিল মাদ্রাসা ২৯৫টি, আর্ট স্কুল ১টি।

ময়মনসিংহের যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে রেলপথ ও সড়ক পথই প্রধান। জেলার অভ্যন্তরে যাতায়তের জন্য নৌপথেও সামান্য কিছু যোগাযোগ ব্যবস্থার আয়োজন আছে, তবে সে সব যোগাযোগ শুধুমাত্র বর্ষাকালেই কার্যকর থাকে, বছরের অন্য সময়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণই সড়ক ও রেলপথ নির্ভর হয়ে পড়ে। নদীগুলোর নাব্যতা হ্রাসের কারণে বর্তমানে নৌপথের ব্যবহার হতাশাব্যঞ্জকভাবে কমে গেছে। তবে বর্ষায় এখনো ধান-পাট নৌপথে পরিবহন করা হয়ে থাকে। ময়মনসিংহের কাচারী খেয়া ঘাট, থানার ঘাট থেকে নৌপথে বাইগনবাড়ি, বিদ্যাগঞ্জ, বালির বাজার, বালিপাড়ায় প্রভৃতি স্থানে যাতায়ত করা যায়।

দীর্ঘকালের হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম শাসনের ঐতিহ্য ময়মনসিংহকে সাংস্কৃতিকভাবে ধনাঢ্য করে গেছে। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ঐতিহ্যে লালিত হয়ে আসছে এই ধারাবাহিক সাংস্কৃতিক বন্ধন। যেসব ব্যক্তিত্ব ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করে গেছেন তাঁরা হলেন এখানকার জমিদারবর্গ, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ আবুল মনসুর আহমেদ, সাহিত্যিক, সাংবাদিক আবুল কালাম শামছুদ্দিন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন প্রমুখ। বৃহত্তর ময়মনসিংহের লোক সংস্কৃতিও রূপান্তরিত হয়েছে ঐতিহ্যে। ময়মনসিংহ গীতিকা বিশ্ব দরবারে অলংকৃত করেছে ময়মনসিংহের নিজস্ব পরিচয়। স্বপ্নের নকশী কাঁথায় বোনা হয়েছে এখানকার বাস্তবচিত্রের কাহিনী। মহুয়া মলুয়া থেকে জয়নুল আবেদীনের চিত্র হয়ে উঠেছে বিশ্বময় ময়মনসিংহের গৌরব গাঁথা। ঈশাখাঁর যুদ্ধ বা সখিনা-সোনাভানের কাহিনী বাতাসে ছড়ায় বীরত্বের হৃদয় ছোঁয়া বিরলপ্রভা।

প্রধান প্রধান উৎসব

নবান্ন:

ময়মনসিংহ জেলাতে সুদূর অতীত হতে নতুন ধান উঠা উপলক্ষ্যে নবান্ন উৎসব প্রতি ঘরে ঘরে পালিত হয়ে আসছে। অগ্রহায়ন মাসে নতুন ফসল ঘরে উঠানোর পর ঐতিহ্যবাহী খাদ্য পরিবেশনের নামই হলো নবান্ন। নবান্নে পিঠা পার্বণের সাথে সাথে পুরনো কিচ্ছা, কাহিনী, গীত, জারি এই সবকে উপজীব্য করে চলে রাত্রীকালীন গানের আসর।

পিঠা উৎসব:

অগ্রহায়ন পৌষের শীতে নবান্নের পিঠা-মিষ্টি উৎসবের সময় ময়মনসিংহের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এক উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে। নানা ধরনের পিঠার মধ্যে রয়েছে তেলের পিঠা, মেরা পিঠা, পাটি সাপটা, মসলা পিঠা, পুলি পিঠা, গুলগুল্যা পিঠা, দই পিঠা, ভাপা পিঠা, দুধ কলা পিঠা, চিতল পিঠা, খেজুর রসের পিঠা, নকসী পিঠা ইত্যাদি।

নববর্ষ ও মেলা:

ময়মনসিংহ জেলার গ্রামাঞ্চলে এখনও শহরের মতো বর্ষবরণের প্রচলন শুরু না হলেও অতিপ্রাচীনকাল হতে এখানে বিরল অথচ লোকজ ঐতিহ্যের দাবী নিয়ে দীপশিখা জ্বালিয়ে বাংলা বর্ষ বিদায়ের এক নীরব আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হতো। মেলা উপলক্ষে মহিলারা বাপের বাড়ীতে নাইয়র আসত এবং মেলায় এসে ছোট বাচ্চারা খেলনা, বাঁশি, কিনতো। মেলায় বিভিন্ন রকম সার্কাস, দোলনা খেলা চলতো।

যাত্রা গান:

সাধারনত শীতকালে প্রাচীন লোককাহিনীর উপর ভিত্তি করে যাত্রার আয়োজন করা হয়। এই সব যাত্রা এবং যাত্রাগান কখনো কখনো রাতব্যাপী হয়ে থাকে। যেসব কাহিনী/বিষয়ের উপর ভিত্তি করে যাত্রা হয় তমধ্যে মহুয়া, নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা এবং স্থানীয় ভাবে রচিত বিভিন্ন কাহিনী/উপাখ্যান অন্যতম।

পালা গান:

বর্তমানে পালাগানের আয়োজন হয় না বললেই চলে। তবে পূর্বে বিভিন্ন স্থানে পালাগানের আয়োজন করা হতো।

নৌকা বাইচ:

বর্ষাকালে নদী বা বড় বড় খালগুলি যখন পানিতে পরিপূর্ণ থাকে তখন বিভিন্ন স্থানে নৌকাবাইচের আয়োজন করা হয়ে থাকে। প্রতিযোগিতার আকারে আয়োজিত এসব নৌকা বাইচ অনুষ্ঠান স্থানীয় প্রশাসন এর সহযোগিতায় আয়োজন করা হয়।

বিয়ে/জম্মদিন/বিবাহ বার্ষিকীর আনুষ্ঠানিকতা সংক্রান্ত

বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার মতোই সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই ময়মনসিংহ জেলায় বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে জম্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী পালনের প্রচলন আগে তেমন না থাকলেও ইদানিং মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের মাঝে তা ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে। বিয়েতে বরের পক্ষ থেকে বরযাত্রী যায় কনের বাড়ীতে। কনের বাড়ীতে বরযাত্রীদের গায়ে রং ছিটিয়ে দেওয়ার রেওয়াজ বহুদিনের, এই নিয়ে ঝামেলাও কম হয় না। বরপক্ষের আনা জিনিস পত্র নিয়ে ঘাটাঘাটি, সমালোচনা, রসাত্মক আলোচনা চলে কনে পক্ষের লোকজনের মধ্যে। খাওয়া-দাওয়া ও বিয়ে শেষে কনেকে বরের বাড়ীতে নিয়ে আসা হয়, সেখানে মহিলারা অপেক্ষা করেন ধান, দূর্বা, চিনি ইত্যাদি নিয়ে কনেকে সাদরে গ্রহণ করার জন্য। পরের দিন বৌভাত অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণত দুই-তিন দিন পর বর ও কনে মেয়ের বাড়ীতে বেড়াতে যায়, যাকে ‘ফিরানী’ বলা হয়। কয়েক দিন সেখানে থেকে পুণরায় বর নিজের বাড়ীতে ফিরে আসেন।

মুক্তিযুদ্ধঃ

মহান ভাষা আন্দোলন, ঐতিহাসিক ৬ ও ১১ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানে উজ্জীবিত ১৯৭০ এর নির্বাচনে বাঙ্গালী জাতি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রাপ্তির আশায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে মনোনীত করার পর থেকেই পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী নানা অজুহাতে ক্ষমতা হস্তান্তর বিলম্বিত করায় প্রতিটি বাঙ্গালী তাদের স্বাধীকার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিভিন্ন প্রকাশ্য ভাষণ ও গোপন নির্দেশের মাধ্যমে গোটা জাতি বিভিন্ন আঙ্গিকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে থাকে। মহান নেতার নির্দেশে জয় বাংলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ময়মনসিংহে গঠিত হয়। ২ মার্চ জয় বাংলা বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী সকাল ১০টায় টাউন হল ময়দানে অভিবাদন জানাবেন বলে আগের দিন থেকে মাইকে ময়মনসিংহ শহরব্যাপী ঘোষণা হতে থাকে। জয় বাংলা বাহিনী প্রধান আবুল হাসেমের নেতৃত্বে জয় বাংলা ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী সারিবদ্ধ ভাবে শহর প্রদক্ষিণ করে টাউন হল চত্বরে সমবেত হয়ে আওয়ামী লীগের সংগ্রামী নেতা রফিক উদ্দিন ভূইয়াকে সশ্রদ্ধ অভিনন্দন জানান। মুহুর্মুহু জয় বাংলা ধ্বনির মধ্যে পাকিস্তানী পতাকা পুড়িয়ে বাংলাদেশের নকশা খচিত পতাকা উত্তোলন করেন তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নাজিম উদ্দিন আহমেদ। অভিনন্দন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন তৎকালীন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, প্রয়াত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী জনাব সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, নেতাকর্মীদের মধ্যে জনাব শামছুল হক, এডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক, ইমান আলী, আনন্দমোহন কলেজের ভিপি আব্দুল হামিদ, মতিউর রহমান, আফাজ উদ্দিন, কমর উদ্দিন, এডভোকেট আনোয়ারুল কাদির, সৈয়দ আহমদ, চাঁন মিয়াসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।

৭ মার্চ ১৯৭১ রেসকোর্স ময়দানে ‘‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে’’। বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক আহবানের পরেই বাঙ্গালী জাতি মুক্তিযুদ্ধের জন্য সংগঠিত হতে থাকে। অবসরপ্রাপ্ত সেনা, পুলিশ এবং দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যগণ অত্যন্ত গোপনে অস্ত্র চালনা ও রণ কৌশল বিষয়ে শিক্ষা দান করেন।

যারই ধারাবাহিকতায় খাগডহর তৎকালীন ইপিআর ক্যাম্প সংগ্রামী জনতা ঘেরাও করে এবং বাঙ্গালী ইপিআর সদস্যদের সহায়তায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে। এ যুদ্ধে ইপিআর সদস্য দেলোয়ার হোসেন ও ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের ড্রাইভার পুত্র আবু তাহের মুকুল শাহাদৎ বরণ করেন। মূলতঃ এই যুদ্ধের পর পরই ময়মনসিংহের সীমান্ত অঞ্চলে অবস্থিত সীমান্ত ফাঁড়িগুলি বাঙ্গালী বিডিআরদের নিয়ন্ত্রনে চলে আসে। নিহত পাক সেনাদের লাশ নিয়ে ময়মনসিংহবাসী বিজয় মিছিল করতে থাকে ও ধৃত অন্যান্য পাকসেনাদের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ময়মনসিংহ জেলখানায় প্রেরণ করা হয়।

যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এক সকালে পুরাতন বিডিআর ভবনের ৩য় তলার শীর্ষে হাজার হাজার লোকের জয় বাংলা ধ্বনির মধ্যে বাংলাদেশের নকশা খচিত পতাকা পতাকা উত্তোলন করেন সাবেক কমান্ডার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মোঃ সেলিম সাজ্জাদ। এ যুদ্ধে আবুল হাসেম, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, ম হামিদ, এসএম নাজমুল হক তারা, মৃত চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের (কাদু মিয়া), কেএম শামছুল আলম, শেখ হারুন, খোকন বিডিআর ও পুলিশের সদস্যসহ জয় বাংলা ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর অনেক সদস্যই অংশগ্রহণ করেন।

মধুপুর যুদ্ধ

ঢাকা থেকে টাংগাইল হয়ে ময়মনসিংহের দিকে অগ্রসররত পাক সেনাদের প্রতিহত করার জন্য পুলিশ, বিডিআর, ছাত্র-জনতা মধুপুর ব্রীজের পূর্ব পাশে অবস্থান নেয় এবং প্রতিরোধ যুদ্ধ চালাতে থাকে। ১৩ এপ্রিল মধুপুর যুদ্ধের পর পাকসেনাদের মুহুর্মুহু স্বয়ংক্রিয় ভারী অস্ত্রের আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হঠতে থাকে । এ যুদ্ধে মরহুম সংসদ সদস্য জনাব শামছুল হক, পুলিশ সদস্য কেএম শামছুল আলম, জনাব আবুল হাসেম, জনাব মোঃ সেলিম সাজ্জাদ, নজরুল ইসলাম দুলাল, মোঃ ফজলুল হক, টেলিযোগাযোগের ২ জন সদস্য জনাব জিল্লুর রহমান ও জনাব আমীর হোসেনসহ জয় বাংলা ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী এবং অনেক মুক্তিযোদ্ধারা অংশগ্রহণ করে।

ময়মনসিংহে বিমান হামলাঃ

পাক সেনারা মধুপুর এবং গফরগাঁও হয়ে ময়মনসিংহের দিকে এগিয়ে আসতে থাকলে নেতৃবৃন্দসহ ময়মনসিংহ শহরের আপামর জনতা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেলে ময়মনসিংহ শহর জনমানব শূন্য হয়ে পড়ে। ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ পাকহানাদার বাহিনী বিমান বাহিনীর সহায়তায় ময়মনসিংহ শহরে প্রবেশের চেষ্টা চালায় এবং ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তর পাশে বাসষ্ট্যান্ডে এবং চলাচলরত নৌযানের উপর বিমান হামলা চালায়। এতে করে প্রায় ৭টি বাস ভস্মিভূত এবং কয়েকজন লোক আহত হয়। যার মধ্যে কৃষ্টপুরের শামছুদ্দিন ওরফে সামু মিয়া ছিলেন। অতঃপর ময়মনসিংহ থেকে সড়ক পথে হালুয়াঘাট হয়ে কড়ইতলী সীমান্ত ফাঁড়িতে বিডিআর ও ছাত্র-জনতা সমবেত হতে থাকে। পথিমধ্যে হালুয়াঘাট খাদ্য গুদাম থেকে এক বাস ভর্তি করে খাদ্য নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা কড়ইতলীর ক্যাম্প ত্যাগ করে ২৭ জন বিডিআর ও ১০/১১ জন ছাত্র-জনতা নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে পানিহাটা মিশনের পশ্চিমে গারো হাইড আউট গড়ে তোলে। এখান থেকে মাঝে মাঝে রামচন্দ্রকুড়া, হাতিপাগার, তন্তরসহ বিভিন্ন সীমান্ত ফাঁড়ী ও শত্রু সেনাদের ঘাঁটিতে আক্রমণ পরিচালনা করা হয়। ২৪ মে ১৯৭১ তারিখে অতর্কিতে পাকসেনারা মর্টারের গোলাবর্ষণ করে পানিহাটা মিশন মুক্তিযোদ্ধাদের হাইড আউটে আক্রমণ চালালে ময়মনসিংহ শহরের কৃষ্টপুরের আব্দুল মতিন শহীদ হন । প্রত্যুত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা রামচন্দ্রকুড়া সীমান্ত ফাঁড়িতে আক্রমন চালিয়ে পাকসেনাদের হটিয়ে দিয়ে সীমান্ত ফাঁড়ির সমস্ত ঢেউ টিন খুলে এনে নিরাপদ আশ্রয়ের বেড়া সৃষ্টি করে। ২৫ মে পাকিস্তানী বাহিনী অতর্কিতে বেপরোয়া গোলাগুলির মধ্য দিয়ে ভারতের ঢালু নামক স্থানে প্রবেশ করে নিরীহ শরণার্থীদের অকাতরে হত্যা করে। এখানে উল্লেখযোগ্যদের মাঝে নিহত হন বিমান বাহিনীর সদস্য আশফাক এবং জনৈক এম,পি,র সহোদর নিজাম উদ্দিন। এই যুদ্ধের বিডিআর সদস্য ছাড়াও অংশগ্রহণ করেন আবুল হাসেম, ম হামিদ, মোঃ সেলিম সাজ্জাদ, নূরুল ইসলাম, মোঃ লিয়াকত আলী, জিয়াউল ইসলামসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাগণ। এখানে উল্লেখ্য যে, বিএসএফ সুবেদার ত্রিপাল সিংসহ ৯ জন সদস্যকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সদস্যরা গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

নালিতাবাড়ী ব্রীজ ধ্বংসঃ

ইতিপূর্বে কয়েকবার ব্যর্থ হওয়ার পর ২২ মে ‘৭১ জনাব আবুল হাসেমের নেতৃত্বে ও বিডিআর সদস্য ফরহাদের সহায়তায় ৪টি কোম্পানীর সম্মিলিত প্রয়াসে রাশিয়া কর্তৃক প্রদত্ত অত্যাধুনিক বিস্ফোরক দ্রব্যের মাধ্যমে নালিতাবাড়ী ব্রীজটি ধ্বংস করা হয়। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের অন্যতম আবুল হাসেম, বিডিআর সদস্য-সুবেদার ফরহাদ, বিমান বাহিনীর সদস্য আশফাক, মোঃ সেলিম সাজ্জাদ, বাবু মান্নান, বাবু মিজানুর রহমান বিশ্বাস, জিয়াউল ইসলাম, মোঃ লিয়াকত আলী, মোঃ আকবর আলী, মোঃ নূরুল ইসলাম, মোঃ আব্দুল মতিন, মোঃ ফজলুল হকসহ অনেক মুক্তিযোদ্ধা ।

তেলিখালী যুদ্ধঃ

হিট এন্ড রান অর্থাৎ মার এবং পালাও পদ্ধতির পরিবর্তে মার এবং জায়গা দখলে রাখ এই পদ্ধতি গ্রহণ করে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী দীর্ঘ ৭ দিন যুদ্ধের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বিগ্রেডিয়ার ক্লে ও বিগ্রেডিয়ার সান্ত সিং ৯২ মাউনটেন্ট ডিভিশনের গোলন্দাজ ইউনিট মুক্তিবাহিনীর পক্ষে আবুল হাসেম মূলতঃ যুদ্ধের পরিকল্পনা করেন। যুদ্ধে যাবার একদিন আগে মোঃ সেলিম সাজ্জাদসহ ভারতীয় রাজরীফ (রাজপুত) ব্যাটালিয়ানের বিভিন্ন কোম্পানীতে সংযুক্ত কমান্ডারগণকে যুদ্ধের পরিকল্পনাসহ অন্যান্য করণীয় বিষয়ে অবহিত করেন। পরবর্তীতে যুদ্ধে যাবার পূর্বে স্ব-স্ব কোম্পানীর অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা সদস্যদের বিষয়টি অবহিত করা হয় এবং নির্ধারিত সময়ে যুদ্ধ যাত্রা শুরু হয়। কর্তৃপক্ষ বেঁধে দেয়া নির্দিষ্ট স্থান অতিক্রম করার সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এ যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩৩ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ডি কোম্পানী ১২৫ জন সৈনিক রেঞ্জার্স ও রাজাকারসহ লোকবল ছিল ২৩৭ জন। এ কোম্পানীর অধিনায়ক ছিলেন ক্যাপ্টেন খালেক। অন্য দিকে ভারতীয় ব্যাটালিয়ানের ৫টি কোম্পানীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের ২০৪ জন যুক্ত হয়ে ৫টি ভাগে বিভক্ত হয়ে এই বিভীষিকাময় যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধে কৃষ্টপুরের আলাউদ্দিন শাহজাহান ওরফে বাদশাহ, পিয়ারপুরের রঞ্জিত গুপ্তসহ ২৯ জন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদৎ বরণ করেন। ভারতীয় পক্ষের আনুমানিক ৫৬ জন সৈন্য শহীদ হন। অপর দিকে পাকসেনাদের ১ জন পাকিস্তানী সেনা কেরামত আলী খান ও আত্মসমর্পনকৃত ৩ জন রাজাকার ব্যতীত সকলেই নিহত হন। এখানে উল্লেখ্য যে, এই তিনজন রাজাকারই ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জের অধিবাসী। এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আবুল হাসেম, মেজবাহ, ওয়াজি উল্লাহ, মোঃ সেলিম সাজ্জাদ, আব্দুর রব, আব্দুর রাজ্জাক, আতাউদ্দিন শাহ, আকবর আলী, শামছুল হক বাদল, সেলিম সরকার রবার্ট, ইকরাম হোসেন মানিক, নেকবর আলী খান, ফজলুল করিম খান, দেবল দত্ত, প্রদীপ গুপ্ত, শ্রীধাম দাশসহ ২০৪ জন মুক্তিযোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। মূলতঃ এই যুদ্ধের পরই ময়মনসিংহের সীমান্ত অঞ্চল স্বাধীন হয়ে পড়ে।

বান্দরঘাটা যুদ্ধঃ

বয়সে তরুন হওয়ার কারণে মোঃ সেলিম সাজ্জাদকে কোম্পানী কমান্ডার থেকে কোম্পানী টু-আই-সিতে নিয়োগ করে তৎস্থলে হাবিলদার জিয়াউদ্দিনকে নিয়োগ করে যুদ্ধের পরিকল্পনা করা হয়। ৫ আগষ্ট ১৯৭১ এর এই যুদ্ধে মূলত নেতৃত্ব দেন জনাব মোঃ আবুল হাসেম। এই যুদ্ধে পরিমলসহ ৩ জন শাহাদৎ বরণ করেন এবং শম্ভূগঞ্জের আব্দুস ছামাদ, মুন্সির হাটের অখিল বাগিতক এবং সরিষাবাড়ীর নূরুল হকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মোঃ সেলিম সাজ্জাদ, মোঃ আকবর আলী, শামছুল হক বাদল, সেলিম সরকার রবার্ট, ইকরাম হোসেন মানিক, নেকবর আলী খান, ফজলুল করিম খান, আব্দুর রাজ্জাক আহত নূরুল হকের সহোদর তিন ভাইসহ অন্যান্য অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা অংশগ্রহণ করেন।

গোয়াতলা যুদ্ধঃ

নগোয়ার আব্দুর রশিদকে কোম্পানী কমান্ডার ও মোঃ সেলিম সাজ্জাদকে কোম্পানী টু-আই-সিতে করে ময়মনসিংহের বিদ্যুৎ ষ্টেশন উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। ১৭ই আগষ্ট ১৯৭১ অপারেশন শেষে ফেরার পথে গোয়াতলা বাজার সংলগ্ন নদীতে নৌকায় মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের এম্বুসের কবলে পরে। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় সকল অস্ত্রই নদীতে নিমজ্জিত হয়। বাকী কয়েকটি অস্ত্র ও গ্রেনেড দিয়ে প্রায় ৫ ঘন্টা শত্রুদের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করে স্থানীয় জনসাধারণদের নিরাপদ আশ্রয়ে প্রেরণ করা হয়। এই যুদ্ধে বাঘমারার ইদ্রিস আলম শাহাদৎ বরণ করেন। মোঃ আব্দুর রশিদ, মোঃ সেলিম সাজ্জাদ, মোঃ আকবর আলী, শামছুল হক বাদল, সেলিম সরকার রবার্ট, ইকরাম হোসেন মানিক, হাসান আহমেদ আনসারী, বাঘমারার নাজিম উদ্দিন, গোয়াতলার মোঃ রফিকুল ইসলামসহ অন্যান্য অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা অংশগ্রহণ করেন।

নান্দাইল যুদ্ধঃ

নান্দাইল থানার অন্যতম যুদ্ধ নান্দাইল যুদ্ধ ১৭ নভেম্বর ১৯৭১ এ সংগঠিত হয়। এই যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা শামছুল হক, ইলিয়াস উদ্দিন ভূইয়া ও জিল্লুল বাকী শাহাদৎ বরণ করেন। একই দিনে থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি শাহনেওয়াজ ভূইয়াসহ ২৭ জন নিহত হন। নান্দাইল উপজেলায় ৩ জন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন তারা হচ্ছেন- আব্দুস ছালাম ভূইয়া (বীর প্রতীক), আনিছুল হক সঞ্জু (বীর প্রতীক) ও আব্দুল জব্বার (বীর প্রতীক)।

এ ছাড়াও ২৭ এপ্রিল ‘৭১ ফুলবাড়ীয়া থানার লক্ষ্মীপুর প্রতিরোধ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ২৭ জন পাকসেনা নিহত হয়। তাছাড়া উক্ত থানার উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ সমূহের মধ্যে রাঙ্গামাটিয়া, আছিম, কেশরগঞ্জ যুদ্ধ অন্যতম।

২৬ জুন ‘৭১ মেজর আফছারের নেতৃত্বে ভাওয়ালিয়াবাজু যুদ্ধে ৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়। এ যুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান শহীদ হন। মেজর আফছারের নেতৃত্বে বাটাজোর, বড়চালা, সোনাখালি, পাড়াগাঁও অন্যতম।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৈচিত্রের লীলাভূমি মনোময় ময়মনসিংহ। এ জনপদের আছে দীর্ঘ সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ঐতিহ্য। সমাজ সংস্কার-শিল্প-সাহিত্য-সাংবাদিকতা-শিক্ষা-রাজনীতি-চিকিৎসাসহ নানা অঙ্গনে কালপরিক্রমায় যুগে যুগে মানুষের অংশগ্রহণ যেমন অনিবার্য ছিলো একইভাবে অংশগ্রহণকারী বিপুল জনগোষ্ঠী থেকে কেউ কেউ হয়ে উঠেছেন অনন্য ব্যক্তিত্ব। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ক’জন ব্যক্তিত্বের পরিচয় নিচে তুলে ধরা হলোঃ

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামঃ জন্ম ১৯২৫, মৃত্যু ৩ নভেম্বর ১৯৭৫। শিক্ষাবিদ-আইনজীবী ও রাজনীতিক। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পুরোধা পুরুষ। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে ১৯৭১-এ তিনি নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশের বিপ্লবী সরকারকে। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হবার পর ৩রা নভেম্বর কারা অভ্যন্তরে ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত চার জাতীয় নেতার একজন সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

আনন্দ মোহন বসুঃ জন্ম ২৩ সেপ্টেম্বর ১৮৪৭, মৃত্যু ২০ আগস্ট ১৯০৬। জন্মস্থান জয়সিদ্ধি, ইটনা, কিশোরগঞ্জ। পিতা- পদ্মলোচন বসু। শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, সমাজসেবক, রাজনীতিক ও সংগঠক।

আব্দুল ওয়াহেদ বোকাইনগরীঃ জন্ম উনবিংশ শতকের শেষার্ধ। জন্মস্থান বোকাইনগর, ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ। রাজনীতিক ও সুবক্তা।

আব্দুল জব্বারঃ জন্ম ১৯১৯, মৃত্যু ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২। জন্মস্থান পাঁচুয়া, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ। ভাষা আন্দোলনে শহীদ আব্দুল জববার ১৯৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মুত্যুবরণ করেন। ২০০০ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।

আব্দুল জব্বার শেখঃ জন্ম ১৮৮১, মৃত্যু ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯১৮। জন্মস্থান বনগ্রাম, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ। সাহিত্যিক ও সমাজসেবী। অসংখ্য ধর্মীয় গ্রন্থের রচয়িতা।

আব্দুল হাই মাশরেকীঃ জন্ম ১ এপ্রিল ১৯১৯, মৃত্যু ১৯৯২। জন্মস্থান দত্তপাড়া, ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ। পিতা- উছমান গনি সরকার। কবি, গীতিকার, নাট্যকার ও গল্পকার।

খান সাহেব আব্দুল্লাহঃ জন্ম ১৮৯৮, মৃত্যু ১৯৮৩। জন্মস্থান নাওরা, ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ। পিতা- আলী নেওয়াজ আহম্মদ। লেখক, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংগঠক। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি-শুক্রবাসরীয় সাহিত্য সংসদ। ‘মোমেনশাহীর নতুন ইতিহাস’ গ্রন্থের রচয়িতা।

আবুল কালাম শামসুদ্দিনঃ জন্ম ৩ নভেম্বর ১৮৯৭, মৃত্যু ৪ মার্চ ১৯৭৮। জন্মস্থান ধানিখোলা, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ। সাংবাদিক, রাজনীতিক ও সাহিত্যিক।

আবুল মনসুর আহমদঃ জন্ম ৩ নভেম্বর ১৮৯৮, মৃত্যু ১৮ মার্চ ১৯৭৯। জন্মস্থান ধানিখোলা, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ। পিতা- আব্দুর রহিম ফরাজী। পৈতৃক নাম আহমদ আলী ফরাজী। আইনজীবী, সাংবাদিক ও রাজনীতিক। বিশিষ্ট সাহিত্যিক এবং অপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্যঙ্গ সাহিত্যিক। পাকিস্তানের মন্ত্রী ছিলেন।

মোঃ আলতাব আলীঃ জন্ম ১৯০৭, মৃত্যু ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৮০। জন্মস্থান সেহড়া ময়মনসিংহ। পিতা- ডেঙ্গু ব্যাপারী। প্রগতিশীল রাজনীতিক আন্দালনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব।

কলম আলী উকিলঃ জন্ম ১৯০২, মৃত্যু ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৩। জন্মস্থান ঈশ্বরগ্রাম, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহ। পিতা মোঃ আলিম উদ্দিন মীর্জা। আইনজীবী সমাজসেবী ও রাজনীতিক। প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (১৯৫৪)।

কেদার নাথ মজুমদারঃ জন্ম ২৬ জৈষ্ঠ ১২৭৭, মৃত্যু ৬ জৈষ্ঠ ১৩৩৩ বঙ্গাব্দ। পিতা লোকনাথ মজুমদার। লেখক, সংস্কৃতি সংগঠক, সাংবাদিক, ঐতিহ্য অনুসন্ধানী। মৈমনসিংহ গীতিকা’র সংগ্রাহক।

গোলাম সামদানী কোরায়শীঃ জন্ম ৬ এপ্রিল ১৯২৯, মৃত্যু ১১ অক্টোবর ১৯৯১। শিক্ষাবিদ-চিন্তাবিদ-পন্ডিত ও লেখক। শিক্ষক নেতা। প্রগতিশীল চিন্তার পুরোধা ব্যক্তিত্ব। অসংখ্য গ্রন্থের প্রণেতা।

রাজা জগৎ কিশোর আচার্য চৌধুরীঃ জন্ম ১২৬৯, মৃত্যু ২২ চৈত্র ১৩৪৫। মুক্তাগাছার মহৎপ্রাণ জমিদার। তাঁর দানশীলতা কিংবদন্তীতুল্য।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনঃ জন্ম ২৯ ডিসেম্বর ১৯১৪, মৃত্যু ২৮ মে ১৯৭৬। ১৯৪৩ সালে অবিভক্ত বাংলার মন্বন্তরের আঁকা তার স্কেচসমূহ বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃস্টি করে। বাংলাদেশে তিনি আধুনিক চিত্রকলার পথিকৃৎ। চারুকলা ইনস্টিটিউট, সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এবং ময়মনসিংহ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালার প্রতিষ্ঠাতা। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন চিত্রকর। সর্বভারতীয় চারুকলা প্রদর্শনীতে স্বর্ণপদক (১৯৩৮), রকফেলার ফাউন্ডেশন ফেলোশীপ (১৯৫৬-৫৭), পাকিস্তানের সর্বোচ্চ পুরস্কার প্রাইড অফ পারফরমেন্স (১৯৫৯), মরণোত্তর স্বাধীনতা দিবস পদক, দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় হতে সম্মান্সূচক ডক্টরেটে ভূষিত হন।

ডক্টর জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাঃ জন্ম ১০ জুলাই ১৯২০, মৃত্যু ২৭মার্চ ১৯৭১। জন্মস্থান ময়মনসিংহ সদর, ময়মনসিংহ। শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুক্তিবাদী ও প্রগতিশীল শিক্ষক ছিলেন। ১৯৭১ সালে র ২৫ মার্চ কালো রাত্রিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আক্রান্ত হলে জগন্নাথ হলের আবাসিক ভবনে থাকাকালে গুলিবিদ্ধ হন এবং ২৭ মার্চ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে।।