ময়মনসিংহশনিবার , ১৪ মার্চ ২০২০
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ভালুকায় কোটি টাকার তক্ষকের জন্য খুন হয় মহসিন

উপজেলা প্রতিনিধি
মার্চ ১৪, ২০২০ ২:৪৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ময়মনসিংহের ভালুকায় কোটি টাকার তক্ষকের জন্যই খুন হয় মহসিন সরকার (৫২) নামে এক ব্যবসায়ী। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ।

গ্রেফতাররা হলেন, ফারুক, সাঈম, রাজিব ও মোশারফ হোসেন। নিহত মোহসিন সরকার উপজেলার ঝালপাঁজা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ভালুকায় ব্যবসা করতেন বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃতরা ইতিমধ্যে আদালতে এ খুনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে পুরো ঘটনা প্রকাশ করেছেন।

ঘাতকদের দেয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে সিআইডি পুলিশ সূত্রে জানায়, মহসিন সরকারের বাড়িতে একটি তক্ষক থাকত। ওই এলাকার বাবুল মিয়ার ছেলে আদিল তক্ষতের বিষয়টি রাজিবকে জানায়। রাজিব বিষয়টি রুবেল এবং আক্তার হোসেনকে জানায়। এরপর তারা সবাই মিলে পরিকল্পনা করে মহসিনের বাড়ির তক্ষতটি তারা ধরে নিয়ে কোটি টাকায় বিক্রি করবে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার রাতে (৩ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়) মহসিনের ঘরের জানালা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে তক্ষক ধরতে ব্যর্থ হয় তারা। ওই রাতে ১১টার দিকে তারা আবার মহসিনের বাড়িতে গিয়ে তক্ষত খোজাখুঁজির চেষ্টা করে।

কিন্তু এ সময় তারা মহসিনের কাছে ধরা পড়ে যায়। এদের একজনকে চিনে ফেলেন মহসিন। মহসিন বিছানার নিচ থেকে রামদা বের করে চোরদের ওপর হামলা করলে ফারুক,সাঈম, রুবেল ও আক্তার মহসিনকে ঝাপটে ধরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে দুই পাশ থেকে টান দিয়ে ধরে। ঘটনাস্থলেই মহসিন মারা যান। এ ঘটনার সময় রাজিব ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে পাহাড়া দিচ্ছিলেন।

খুনের পর ঘাতকরা মহসিনের ট্রাঙ্ক ভেঙ্গে দুটি মোবাইল সেট, একটি কাশার বাটি ও একটি সেমাইয়ের মেশিন লুট করে নিয়ে যায়। ঘটনার পরদিন (৪ অক্টোবর) দুপুরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় বসতঘরের খাট থেকে মহসিন সরকারের লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায় ভালুকা মডেল থানা পুলিশ।

ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, নিহতের ঘর থেকে চুরি হওয়া দুটি মোবাইল সেট উদ্ধারের পরই ঘটনার জট খুলে। কুমিল্লার নাঙ্গলকোর্টর বাসিন্দা মাহবুব হকের কাছ থেকে মোবাইল সেট দুটি উদ্ধার করা হয়।

মাহবুব সেট দুটি পান তার ছোট ভাই জুবাইরের মাধ্যমে। জুবাইর জানান, ময়মনসিংহে জেলার মুক্তাগাছা গ্রামের মৃত ইয়াদ আলীর ছেলে ফারুকের কাছ থেকে মোবাইল সেট ক্রয় করেন তিনি। সেই সূত্র ধরে ভালুকার সিডস্টোর বাজারের একটি ওয়েল্ডিংয়ের দোকানের কর্মচারী ফারুককে আটক করে পুলিশ।

সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার শওকত আলম পিপিএম বলেন, গত ১০মার্চ রাতে ফারুক (২৪) ও উপজেলা বড়চালা গ্রামের ছফির উদ্দিনের ছেলে সাঈম (২০) কে আটক করি আমরা। তাদের জবানবন্দির প্রেক্ষিতে পর দিন হত্যা সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে উপজেলার ঝালাপাঁজা গ্রামের মুস্তু মিয়ার ছেলে রাজিব (২৩) ও উপজেলার শিরিরচালা গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে মোশারফ হোসেন (৩৫) কে আটক করা হয়।

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে আটক ৪ জনই মহসিন সরকার হত্যায় জড়িত বলে জবানবন্দি দেয়। এদিকে নিহতের স্ত্রী পারভীন আক্তার বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে করা হত্যা মামলায় গ্রেফতার হন নিহতের ছোট ভাই ঝালপাঁজা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রমজান আলীকে আটক করেন ভালুকা মডেল থানা পুলিশ।

এদিকে মামলার বাদী পারভীন আক্তার বলছেন ভিন্ন কথা। তক্ষতের কারণে নয়, পরিবারিক অর্ন্তদ্বন্দ্বের কারণেই তার স্বামী খুন হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

তিনি বলেন, গত দুই মাস পূর্বে রুবেল নামে আরও একজনকে সিআইডি পুলিশ এরেস্ট দেখিয়ে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাবাদ করেন। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় আমার স্বামীর খুনের ঘটনায় জড়িত বলে জবানবন্দিও দেয় রুবেল। সেই জবানবন্দির ভিডিও অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার খন্দকার ছাইদ আহাম্মদ আমাকে দেখিয়েছেন। অথচ সেই রুবেলকে এ মামলায় অন্তর্ভূক্তি না করে চার্জসিট দেয়ার চেষ্টা চলছে।’

পারিবারিক অর্ন্তদ্বন্দ্বের কারণে মহসিন খুন হয়েছে দাবি করে পারভীন আক্তার বলেন, সম্প্রতি আমার দেবর রমজান আলী বেশ কিছু জমি বিক্রি করেছেন। সেই জমিতেও আমাদের মালিকানা রয়েছে। জমি বিক্রির টাকা দিয়ে সে মামলা থেকে পার পাওয়ার চেষ্টা করছেন। তক্ষতের ঘটনায় আমার স্বামী খুন হতে পারে না। কারণ এ তক্ষত আমার বাড়িতে প্রায় ১০বছর যাবত বসবাস করছে।

মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা (এস.আই) জিয়াউর রহমান বলেন, লুন্ঠিত মোবাইলের সূত্রে ধরেই এ খুনে রহস্য উদ্ধঘাটিত হয়েছে। মামলার বাকি আসামিদের ধরার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

    ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com