ময়মনসিংহশনিবার , ১২ অক্টোবর ২০১৯

শেষ বিকেলের গৌরীপুর…মোশাররফ হোসেন

গৌরীপুর নিউজ
অক্টোবর ১২, ২০১৯ ১২:৪৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ইদানিং কেন জানি ৫ টাকার একটি কলম প্রিয় থেকে প্রিয়তর হয়ে উঠছে। কাল ক্ষেপন কারী একটি পেশা এই কলম প্রেমের মাঝখানে বিরাট ছন্দপতন ঘটিয়েছে। কেবলই প্রশ্ন করি? এই কলম, তোমার ঐ বিশাল ক্ষমতা কে দিয়েছে তোমায়? আমায় একটু দিবে।বেচারা ভীষন হাড়কিপ্টে,একটুও দিতে চায় না। আমায় বলে চেয়ে দেখ- ঐ দূর শূন্য পানে — —
মটর বাইক চেপে গুন গুন করে গান করি,যাতে চোখের ঘুম দূর হয়। আমার চোখে রাজ্যের সমস্ত ঘুম ভর করে ঐ বাইক চালানো অবস্থায়।শার্টের পকেটে স্ত্রীর দেয়া লবঙ্গ,এলাচ,দারচিনি অথবাপান,চুইংগিয়াম মুখে দিয়েও পার পাইনি।চলন্ত অবস্থায় দুই দুইবার তো চিৎপটাং পড়েই গেলাম। রাগ করে ঐ বছর আর এর জন্মদিন পালন করিনি। আরেক বার আমার স্ত্রী, অনেক শখ করে আমার বাইকে উঠেছে। অল্প এগুতেই চিৎপটাং তাও আবার শহরের ঐ ড্রেনে। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি – এক্কেবারে কালো পেত্নী,আমি তো ভীষন খুশী। গায়ের চামড়া কালো হলে কেমন লাগে এবার বুঝ। ওর চরম রাগান্বিত জবাব- তুমি কি মনে করেছ? আমি কি বুঝিনি? তোমার যে একজন আছে তা বুঝতে আমার আর বাকী নাই। এ ভাবে মারার চেয়ে একেবারে মেরে ফেল। তাহলেই তো তোমার পথ খালাস। ওকে আমি কি করে বুঝাই ঐ ঘুমের জন্যে জীবনে কত্ত পরীক্ষা মিস করেছি। একবার তো Nuclear Physics পরীক্ষার আগের দিন সারা রাত পড়ে বাসে করে University যাচ্ছি পরীক্ষা দিতে। মাঝে ষ্টেশনে সব ছাত্র নেমে গেল, আমি টেরই পাইনি। হঠাৎ ঘুম ভেঙে Contructor কে জিগ্যেস করি- আমি কোথায়? ও বলে আমরা তো আরও আধা ঘন্টা আগেই এখানে এসেছি। আপনি নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন বলে ডাক দিইনি।আমি বললাম তুই এ কি করেছিস? প্রয়োজনে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতি। সব শেষ ! আমিও versity তে পৌছলাম, পরীক্ষা ও শেষ হলো। ঐ Subject টা পরের বছর পরীক্ষা দিয়ে পাশ করি। আজ বিকেলে আর গুন গুন করে গান গেয়ে বাড়ী ফিরিনি। দুচোখ ভরা জল আর বুক ভরা ভালবাসার ব্যথা নিয়ে এসেছি।
আমি নিজেরে বলি- হে সৃষ্টিকর্তা মানব প্রেম তো আপনিই দিয়েছেন। আমার চোখের সামনে আমার অনুভূতি গুলি ভোতা হয়ে যাচ্ছে, শব্দসম্ভার ক্ষীণ হয়ে আসছে, সে নালিশ আমি আপনাকে করিনি।কিন্তু মানুষে মানুষে সম্পর্ক, আত্মার বন্ধন তো আপনারই দান। কেন তাকে এতটুকু সান্ত্বনার বানী দেননি, কেন দেননি এতটুকু করুনার বানী
ঐ দূর বহুদূর তাকাতেই ” কলতাপাড়া ” এর সাথে গত চার বছরে আমার সাথে এক ভক্তি মূলক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বাস্তবে যাকে দেখিনি অন্তত পক্ষে তার আবক্ষ মূর্তির প্রতি শেষ বিকেলে একটি সালাম দিয়ে বলি– ভাল থাকুন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি। আর বলি — আচ্ছা, জনাব আপনার এই বাংলা কেন এত্ত সুন্দর। তবে কি ঐ সুন্দরের মাঝেই রয়েছে আমার না বলা কথা মালা!
আবার ঐ পাম গাছের বিস্ময় কর জবাব – আরে আগন্তক শত বছরকে এই বুকে ধারন করে ঠিক ঠায় দাঁড়িয়ে আছি এই গৌরীপুরে। ঐ বৃক্ষের এই গৌরীপুর প্রীতি আমাকে অবাক করেছে। শত বছরের প্রেম, কত কথা আর কত ব্যথা! দেখেন কত পুরাকীর্তি, জমিদারী প্রথা, শ্বশানঘাট, হিজল বিল এর সবিই তো আমি, আমিই গৌরীপুর। তাহলে কে নয়নের মাঝে নিয়েছে ঠাঁই। এই প্রকৃতি না এই কৃষ্টি? এই কৃষ্টি আর এই জনপদের মানুষ সবই এক সুতোয় গাঁথা। ঐ মানুষ যাদের চোখে আমি দেখেছি হাজারো স্বপ্ন। তাদের স্বপ্ন পূরনে কেউ পাশে নেই। কিন্তু তারা আমাকে স্বপ্নে বিভোর করেছে সারা বেলা। কত্ত রকম মিষ্টি মিষ্টি নাম, রুকন,রেজাউল,রফিক, লুৎফর,জুয়েল,আশরাফ, ফারুক, নুরমোহাম্মদফকির, আরোও কত কি —-? ঐ মুখ পানে চেয়ে আমি আশ্রয় পেয়েছি, পেয়েছি নির্ভরতা আর কাঁধে কাঁধ রেখে বলেছি আমি তোমার শুধুই তোমাদের।
আজ যে মায়ার বাধনের সাথে আমার সম্পর্কের বিচ্যুতি ঘটল, তা শুধু আমার অন্তরযামীই জানে।যে প্রশংসা,ভালোবাসার শেষ বিকেলের গৌরীপুর আমি দেখলাম, তা আমার জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল পাতাটিতে লিপিবদ্ধ করলাম। অস্তমান সূর্য যেমন স্বপ্ন দেখায় একটি স্নিগ্ধ সকালের তেমনি পার্থজনের বিদায় আর নবজনের শুভাগমনেই আলোকিত হইবে আমার গৌরীপুর। প্রাপ্তির সকল শাখাতে তুমিই শ্রেষ্ঠ, তুমিই চির ভাস্বর। তুমিই চিরঞ্জীব, তুমিই আমার প্রিয় গৌরীপুর। নয়ন তোমারে পাইবে না দেখিতে, তবুও তুমি রহিবে মোর নয়নে নয়নে।
লেখক- মোশাররফ হোসেন, শাখা ব্যবস্থাপক, জনতা ব্যাংক লিঃ, মুক্তাগাছা শাখা।

    ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com