ময়মনসিংহবৃহস্পতিবার , ১৭ অক্টোবর ২০১৯
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সুনামগঞ্জ হাওরাঞ্চলের লাখো পরিবার নিরাপত্তাহীনতায়

সাব‌রিনা জান্নাত সূচনা
অক্টোবর ১৭, ২০১৯ ১২:২৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলায় প্রবাদ আছেÑ বর্ষায় নাও আর হেমন্তে পাউ; অর্থাৎ বর্ষার পরের মওসুমে ঘরে ঘরে ফসল উঠতে শুরু করে। জেলার অবহেলিত ১১টি উপজেলার বেশির ভাগ মানুষ বিশাল হাওরের বুকে ছোট দ্বীপের মতো উঁচু স্থানে বসতবাড়ি তৈরি করে বসবাস করছে। এর চার পাশেই রয়েছে এক ফসলি বোরো জমি। এই জমি বর্ষায় পানিতে ডুবে থাকে ছয় মাস। আর শুষ্ক মওসুমে বোরো ধানের চাষাবাদ। কিন্তু নেই তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তাই হাওর পাড়ের মানুষের দাবি নিরাপত্তার স্বার্থে হাওরে হিজল-করচসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরোপণ ও হাওরের মধ্যবর্তী স্থান নিরাপত্তা টাওয়ার নির্মাণের।
জানা যায়, জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে হাওরবেষ্টিত তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, দিরাই, শাল্লা, ধর্মপাশা, জগন্নাথপুর উপজেলা বছরের ছয় মাস মোট আয়তনের ৭০ ভাগই পানিতে তলিয়ে থাকে। এসব উপজেলার সাথে প্রত্যন্ত এলাকার নেই ভালো সড়ক ব্যবস্থা। ফলে বর্ষাকালে চলাচলের একমাত্র অবলম্বন নৌকা। আর শুষ্ক মওসুমে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করেন হাওরবাসী। বর্ষা হাওরের বিশাল ডেউ যেমন বাড়িঘর ভাঙে, শুষ্ক মওসুমে বোরো ধান চাষাবাদ করে হাওর পাড়ের বাসিন্দারা। তারা পায়ে হেঁটে বিশাল হাওর পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হয় উপজেলা ও জেলা সদরে। এ ছাড়াও বর্ষায় পানিতে ডুবে থাকা বড় বড় হাওরগুলো শুষ্ক মওসুমে (ছয় মাস) শুকিয়ে যাওয়া পর নিজ বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে হাওরে গিয়ে লাখ লাখ কৃষক পরিবার এক ফসলি বোরো ধানের আবাদ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে বংশপরম্পরায়। ফলে প্রতি বছর ঝড়, তুফান, বিশাল বড় বড় ডেউ (বর্ষায়) ও বজ্রপাতের মুখে পড়ে বহু সাধারণ মানুষ মৃত্যুর মুখে পড়ে।
জানা যায়, চলতি বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর দিরাই উপজেলার কালিয়াগুটা হাওরের নৌকাডুবির ঘটনায় শিশু নারীসহ ১০ জনের প্রাণহানি হয়। এ ছাড়াও গত ১০ বছরে নৌকাডুবে ১২৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ ছাড়াও বজ্রপাতে শতাধিক মানুষ নিহতের পর থেকে এলাকাবাসী হাওরের নিরাপত্তা নিয়ে দাবি তুলেছেন। তাদের সাথে সহমত পোষণ করেছেন জেলা সচেতন মহলসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ, তারাও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
ওবায়দুর রহমান, সাবজলসহ হাওরবাসী জানান, ভরা বর্ষায় হাওরগুলো ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। বর্ষাকালে হাওরের উত্তাল তরঙ্গের মাঝেও জীবন-জীবিকার তাগিদে লাখ লাখ মানুষকে এ সময় নৌকা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করার সময় দুর্ঘটনায় শিকার হলেও সবাই নিরাপত্তার টাওয়ারে ও গাছের আশ্রয় নিতে পারবে। এতে কিছুটা হলেও মৃত্যুর ঝুঁকি কমে আসবে।
দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের পাঠাবুকা গ্রামের কৃষক আইনাল মিয়া বলেন, প্রতি বছরই শুষ্ক মওসুমে এক ফসলি বোরো ধানের চারা রোপণ করার সময় এবং বৈশাখ মাসে কাটা সময় প্রবল ঝড়-তুফানের সাথে বজ্রপাতে বহু মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। হাওর পাড়ের মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে হাওরের মধ্যবর্তী স্থানগুলোতে নিরাপত্তা টাওয়ার নির্মাণ ও হিজল করচসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরোপণ করলে বৃক্ষ যেমন দুর্ঘটনাকবলিত মানুষের আশ্রয়স্থল হবে, তেমনি হাওরের মাঝখানে চিরহরিৎ বর্ণের হিজলের সারি সারি বৃক্ষ ভ্রমণপিয়াসী পর্যটকের নজর কাড়বে।
হাওরবেষ্টিত তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, হাওর পাড়ের মানুষের জীবন বাঁচানো এবং মৃত্যু প্রতিরোধে হাওর পাড়ের মানুষের চলাচলের নিরাপত্তার স্বার্থে নিরাপত্তা টাওয়ার ও বৃক্ষরোপণ খুবই প্রয়োজন। আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ করব এবং টাওয়ার ও বৃক্ষরোপণের আমার পক্ষ থেকে আপ্রাণ চেষ্টা করব।

    ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com