ময়মনসিংহরবিবার , ৫ জানুয়ারি ২০২০

১৭ কোটি টাকার ঘাটতিতে বাকৃবি

গৌরীপুর নিউজ
জানুয়ারি ৫, ২০২০ ২:৩২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

নিয়মবহির্ভূত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাড়তি সুবিধা দিতেই তিন বছরে প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয় করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে বেতন বৈষম্য নিরসন কমিটি করে মোট ৪১৮ জনকে আর্থিক সুবিধা দেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর।

সুবিধা পেতে নতুন করে আবেদন করেছে আরো ২২৯ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। নতুন আবেদনসহ সবাইকে সুবিধা দিতে প্রতিবছর ব্যয় হবে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

এছাড়াও বিভিন্ন খাতে ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা ঘাটতি রয়েছে বলে জানা গেছে।

সম্প্রীতি ইউজিসি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে চলমান সান্ধ্য কোর্স বন্ধসহ ১৩ দফা পরামর্শ দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিধিবিধান এবং সরকারের নিয়মনীতি প্রতিপালন করা অবশ্য কর্তব্য। এছাড়া আরো বলা হয়েছে বিধিবহির্ভূতভাবে ‘সেশন বেনিফিট’সুবিধা দেয়া এবং শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিম্নতর গ্রেড থেকে উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত করা বাঞ্ছনীয় নয়। সরকারি আর্থিক বিধিমালা অনুযায়ী আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা সংশ্লিষ্ট সবার জন্য প্রতিপালনীয়।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর তোয়াক্কা না করেই ২০১৬ সালে ৫০ জন অধ্যাপককে উচ্চতর বেতন স্কেল দেয়ার বিষয়টি অনুমোদন করে বাকৃবি প্রশাসন। পে-স্কেল বাস্তবায়ন কমিটির সুপারিশে এবং ওই ৫০ জন অধ্যাপকের চাপে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর এমনটা করতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানা গেছে।

তবে ওই অধ্যাপকদের উচ্চতর স্কেল পাওয়ার ক্ষেত্রে একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছিল প্রশাসন। সেটি হলো- ভবিষ্যতে সরকার কর্তৃক স্পষ্টায়িত ও প্রজ্ঞায়িত জাতীয় বেতন স্কেল- ২০১৫ অনুযায়ী সংশিষ্ট শিক্ষকদের বেতন-ভাতাদি সমন্বয় করা হবে। অথচ ওই অধ্যাপকদের চাপে পড়ে উপাচার্য সেই শর্ত শিথিল করতে বাধ্য হয়েছেন। পরে ওই একই সুবিধা পেতে অধ্যাপকদের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপাচার্যকে নানাভাবে চাপ দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করা হলে ওই সময়ে যেসব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী পূর্বের বেতন কাঠামো অনুযায়ী সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাদের জন্য ‘বেতন বৈষম্য নিরসন কমিটি’ গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই সময়ে ৫৫০ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী আবেদন করলেও কমিটির সুপারিশে দুই শতাধিক শিক্ষক, এক শতাধিক কর্মকর্তা এবং ৮০ জনের অধিক কর্মচারীকে বাড়তি সুবিধা দেয়া হয়। তবে যদি কোনো অডিট হয় তাহলে তারা টাকা ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে এমন মুচলেকা নেয় ওই কমিটি। এছাড়াও সরকারি নিয়মের বাইরে শিক্ষকদের পিএইচডির জন্য একটি, ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরে একটি, মাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত সকল পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিধারীদের মোট চারটি ইনক্রিমেন্টসহ বিভিন্নভাবে সুবিধা দেয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের জন্য কারিগরি ভাতা ও ঝুঁকি ভাতা দেয়া হচ্ছে যা সরকারি নিয়মবহির্ভূত। তবে ২০১৬ সালে অডিট আপত্তি আসলেও তা এখনো বাতিল করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ওই সময়ে বেতন বৈষম্য নিরসন কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মনোরঞ্জন দাস।

কি কি মানদণ্ডে ওই ৪১৮ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বাড়তি সুবিধা দিতে সুপারিশ করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিন বছর আগে আমি ওই কমিটিতে ছিলাম। এরপরে অনেকগুলো কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছি। এত আগের বিষয়ে মনে থাকার কথাও না। আমার কিছুই মনে নেই।

এ বিষয়ে বেতন বৈষম্য নিরসন কমিটির বর্তমান সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেয়রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হারুন অর রশিদ বলেন, জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর পর শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাড়তি সুবিধা দেয়ার কোনো নীতিমালা নেই। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনির্দিষ্ট কোনো নিয়মও নেই।

নতুন আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন যারা আবেদন করেছে তাদের কোনো ধরনের সুবিধা দেয়ার প্রশ্নই আসে না। আর যারা সুবিধা পাচ্ছেন তাদের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. লুৎফুল হাসান বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

    ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com