ময়মনসিংহশুক্রবার , ২০ আগস্ট ২০২১
আজকের সর্বশেষ সবখবর

১৭ বছরের আবদুল্লাহ তালেবানের ভীতিকর পরিস্থিতির বর্ণনা দিলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
আগস্ট ২০, ২০২১ ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

আফগানিস্তানের কুন্দুজে ৪০ জনের মতো কিশোর মাদ্রাসাছাত্রকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বহনে বাধ্য করেছিল তালেবান যোদ্ধারা। বার্তা সংস্থা এএফপিকে এই ভীতিকর পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছে ১৭ বছর বয়সী আবদুল্লাহ। গত সপ্তাহে কুন্দুজে তালেবান যোদ্ধারা ঢুকে পড়ার পর আবদুল্লাহকে রকেটচালিত গ্রেনেড পার্শ্ববর্তী এক পাহাড়ে বহন করতে বাধ্য করে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভয়ে অস্ত্র বহনে বাধ্য হয় মাদ্রাসাছাত্র আবদুল্লাহ।
ওই মাদ্রাসাছাত্র জানায়, সে যখন রাস্তায় বের হয়েছিল, তখন তালেবান সদস্যরা তাকে থামায়। একটি মাদ্রাসার সামনে থেকে তার মতোই আরও ৩০-৪০ জন কিশোরকে দাঁড় করায় তারা। এদের অনেকের বয়স ১৪ বছরের মতো।
আবদুল্লাহ বলে, তালেবানের অস্ত্র বহন করে তাদের দলে যুক্ত হতে নির্দেশ দেয় আমাদের। যখন আমাদের অভিভাবক এগিয়ে এসে মুক্তি দিতে অনুরোধ করে, তখন তাদের অস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখানো হয়।
আবদুল্লাহ আরও বলে, তালেবান সদস্যরা তার পিঠে ২০ কেজি ওজনের রকেটচালিত গ্রেনেড বেঁধে দেয়। এ ছাড়া দুই হাতে ধরিয়ে দেয় গোলাবারুদের বাক্স। এরপর তা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়। তার ওপর দিয়ে তিন ঘণ্টার মতো এই অগ্নিপরীক্ষা চলে।
এরপর পরিবার এসে মুক্তি দিতে অনুরোধ জানালেও তারা সাড়া দেয়নি। এ সময় যারা পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তালেবান সদস্যরা তাদের ধরে ফেলে। আবদুল্লাহ জানায়, কিশোরদের ধরে ব্যাপক মারধর করে তালেবান সদস্যরা। তার শরীরে এখনো মারধরের চিহ্ন রয়েছে। এক ঘণ্টা এগোনোর পর তার হাতে একটি অ্যাসল্ট রাইফেল তুলে দিয়ে গুলি চালাতে বলা হয়। তাদের একটি পুলিশ ঘাঁটিতে হামলা চালাতে বলা হয়। আবদুল্লাহ বলে, ‘ওই সময় আমি ভয়ে কাঁপছিলাম। আমি অস্ত্র ধরতে পারছিলাম না। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে উঠি।’
কুন্দুজের ওই লড়াইয়ের সময় আফগান সরকারি সেনারা পাল্টা আক্রমণ চালায়। আবদুল্লাহর ভাষ্য, ওই লড়াইয়ে অস্ত্র বহনকারী কয়েকজন কিশোরের দেহে গুলি লাগে। তাদের ব্যাগে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে তারা মারা যায়। এ লড়াইয়ে একজন তালেবান যোদ্ধা মারা যায়। আরেকজনের পায়ে গুলি লাগে।
ওই লড়াইয়ের ঘটনা বর্ণনা করে আবদুল্লাহ বলে, যুদ্ধের সময় তার ইউনিটে থাকা তালেবান যোদ্ধাদের অর্ধেকই নিহত বা আহত হয়। তখন সে পালানোর সুযোগ পায়। বন্দুক ছেড়ে দৌড়ে পালিয়ে যায় সে। এক ঘণ্টা পর সে বাড়িতে পৌঁছায়।
আবদুল্লাহ বলে, ‘আমি অনেক ভয় পেয়েছিলাম।’ ওই সময় তার পরিবার পালানোর পথ খুঁজছিল। তারা রাজধানী কাবুলে নিরাপদ আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা করছিল। তাদের জিনিসপত্র সব বন্ধক রেখে অর্থ ধার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। আবদুল্লাহ বলে, ‘আমরা সঙ্গে কিছুই নিতে পারিনি। এমনকি খাবার পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়ে এসেছি।’
প্রায় ১৫ ঘণ্টার যাত্রা শেষে মা-বাবা, দাদা-দাদি ও ভাইবোন নিয়ে কাবুলে এসে পৌঁছায় আবদুল্লাহর পরিবার। এরপর থেকে কাবুলের একটি পার্কের তাঁবুর নিচে কাটছে তাদের দিনরাত। আবদুল্লাহ জানায়, বন্দুক চালাতে রাজি না হওয়ায় এক তালেবান সদস্য তার পেটে বন্দুকের বাঁট দিয়ে আঘাত করেছিল, তার সে ব্যথা এখনো রয়েছে।
আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছে সে। আবদুল্লাহ জানায়, যখন তাকে ধরা হয়েছিল তখন সবার আগে পরিবারের কথাই মাথায় এসেছিল তার। তার ভাষ্য, ‘আমি যদি আহত হই বা মারা যাই, তাদের কী হবে?’

    ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com