খানাখন্দে নেত্রকোনার ঠাকুরাকোনা-কলমাকান্দা সড়কের বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। এতে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ। ঈদকে সামনে রেখে সড়কটিতে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।বাড়বে দুর্ঘটনাও।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বন্যায় নেত্রকোনায় ঠাকুরাকোনা-কলমাকান্দা সড়কটির বিভিন্ন অংশে ভেঙে যায়। বারবার সংস্কার কাজ হলেও কাজের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে কিছু দিন যেতে না যেতেই ২০ কিলোমিটার সড়কের পুরো সড়কেই ভেঙে খানাখন্দকে পরিণত হয়েছে। গত ৫ বছরেও সড়কটি সংস্কার করা হয়নি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করলেও এখন সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই প্রায় ২০ কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করছেন। ফলে সময় ও অর্থের অপচয় বাড়ছে। কলমাকান্দা বাসস্ট্যান্ড হতে বাহাদুরকান্দা, গুতুরা বাজার হতে দশধার পর্যন্ত সড়কের অবস্থা আরও খারাপ।
স্থানীয় সড়ক বিভাগ প্রতি বছর ২/১ বার সড়কের ভাঙা অংশ মেরামতের নামে (মেইনটেইন্স) বিপুল অংকের বরাদ্দ এনে দায় সারছে। সড়কে ছোট-বড় খানাখন্দ তৈরি হওয়ায় তা চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। ভুক্তভোগী স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত এই সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে ইট উঠে গেছে। পাশাপাশি ছোটবড় অনেক খানাখন্দ তৈরি হওয়াতে রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পুরো সড়ক জুড়েই কোথাও কোথাও দেবে উচুঁ-নিচু হয়ে গেছে। আবার কোথাও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ৬ মাস ধরে ২/৩ নম্বর আধলা (নষ্ট) ইট দিয়ে জুড়াতালি দিয়ে রাখা হয়েছে সড়কটি। ফলে যানবাহন চলা তো দূরের কথা পথচারীরা পায়ে হেঁটে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই হোঁচট খায়। ফলে মোটরসাইকেলসহ মালবাহী যানবাহন বিকল্প রাস্তা ধরে পাবই- সিধলী সড়ক হয়ে রাস্তা ঘুরে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে চলাচল করছে।
হিরাকান্দা গ্রামের জালাল আকন্দ, পাবই গ্রামের আলী উসমানের ছেলে মোজাম্মেল হক, একই গ্রামের মৃত সুরুজ আলীর ছেলে দিপ্ত মিয়া, রায়পুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা সুরুজ ফকির বলেন, এই রাস্তাটি একটি জনগুরত্বপূর্ণ রাস্তা। রাস্তাটি ৫/৬ বছর আগে নামকাওয়াস্তে মেরামত করা হয়েছিল। বেশিদিন টিকে নাই। আজকাল অনেক ঠিকাদারের কাজ বড়জোড় ৬ মাস গেলেই আর থাকে না। তারপর আমাদের এলাকা নিচু হাওর এলাকা, কলমাকান্দা-ঠাকুরাকোনা ২০ কিলোমিটার সড়ক। এই সড়কটি মূলতই উচ্চতা কম, বন্যার পানিতে সহজেই নিমজ্জিত হয়ে যায়। কাজেই সরকার সঠিক পরিকল্পনা করে সঠিক কাজ করলে এই সড়কের এমন বেহাল দশা হতো না।
গুতুরা-বড়তলা গ্রামের কায়ছার, দশধার গ্রামের দবীর হোসেন ও হুমায়ন কবীর জানান, প্রায় দেড় বছর ধরে এই সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী। এই রাস্তা দিয়ে সীমান্তবতী উপজেলা কলমাকান্দা, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর এলাকা ও নেত্রকোনার শত শত গ্রামের মানুষকে চলাচলা করতে হয়। এছাড়াও বাহাদুরকান্দা, ডুবিয়ারকোনা, গুডমন্ডল, পাবই, হিরাকান্দা, নিশ্চিন্তপুর, বাইশদার দশধার প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাইস্কুলসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষকে প্রতিনিয়ত চলাচল করতে হয় এই পথ দিয়ে।
অপরদিকে বাইশদার গ্রামের তুফান আলী, হুমায়ন, সালিপুরা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদির উদ্দীন, বালু ব্যবসায়ী শাজাহান, ঠাকুরাকোনা বাজারের শিক্ষক কাশেম, লিটন সাহা, বাবুল সাহা ও হোসেন আলী জানান, কলমাকান্দা বাসস্ট্যান্ড থেকে গুতুরা বাজার, পাবই থেকে দশধার পর্যন্ত এবং দশধার থেকে ঠাকুরাকোনা সড়কের পুরো রাস্তাই বড়-বড় গর্ত, খানাকন্দকে ভরে গেছে। সেগুলো জোড়াতালি দিযে রাখা হচ্ছে। এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের শতশত যানবাহন চলাচল করে। সড়কটিতে খানাখন্দ থাকায় এবং বেইলি ব্রিজগুলো অকেজো ও ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় প্রায় কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে। অথচ গত দুই বছর আগে সড়কটি নির্মাণ বাবদ প্রায় কোটি টাকা এবং সম্প্রতি সড়কটি চলাচলের উপযোগী করার জন্য এক কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে।
নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম তরফদার বলেন, সড়কটির জন্য ৩১০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এ বছর ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। ল্যান্ড সার্ভে চলছে। আর ঈদে সড়কটি সাময়িক মেইনটেন্স করে চলাচলের উপযোগী করে দেয়া হবে।


ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com