আবদুল কাদির: “শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড” আর এই শিক্ষার স্থম্ভ হলো প্রাথমিক শিক্ষা। তাই প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সফলতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে হলেও প্রশ্নের মুখেই পড়ে আছে শিক্ষার মান। অনেক বিদ্যালয়ের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন, শিক্ষক সংকট, নেই অবকাঠামো, যাও আছে তাও জরাজীর্ণ।
তেমনি একটি জরাজীর্ণ প্রাথমিক বিদ্যালয় ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ৮নং ডৌহাখলা ইউনিয়নের ৫৯নং আহসানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে পরিত্যাক্ত জরাজীর্ণ ও চাল বিহীন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে অর্ধ খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষায় ব্যাহত হচ্ছে শ্রেণি কার্যক্রম। এতে বিদ্যালয়ের ২৪১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে রীতিমত হিমসিম খাচ্ছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, দেশ স্বাধীনতার আগে ১৯৭০ সালে এলাকার দানশীল ব্যক্তিদের সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে টিনের ছাউনি আর ইটের দেয়ালে তৈরি করা হয় একটি ভবন। এটিতে দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চললেও তা একসময় ব্যবহার অনুপোযোগি ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়াতে কর্তৃপক্ষ ভবনটিকে পরিত্যাক্ত ঘোষনা করেন। পরবর্তীতে আরেকটি দুই রুমের বিল্ডিং নির্মান হয় বর্তমানে সেটিও ব্যবহার অনুপযোগী।
সর্বশেষ ২০১০-১১অর্থ বছরে পিইডিপি-২ এর আওতায় এলজিইডির বাস্তবায়নে ৩ কক্ষ বিশিষ্ট আরও একটি একতলা ভবন নির্মান করা হয়। বর্তমানে উক্ত ভবনে একটি কক্ষে অফিসিয়াল কার্যক্রম আর অপর দুইটি শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে মাত্র দুটি শ্রেণিকক্ষ নিয়ে বিপাকে পড়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাই বাধ্য হয়ে জরাজীর্ণ পরিত্যাক্ত ভবনের শ্রেণিকক্ষে কখনো আকাশের নিচে বা কখনো গাছ তলায় পাঠদান করা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নিয়ে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপুল চন্দ্র সেন জানান, ২৪১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শ্রেণিকক্ষ সংকটে হিমসিম খেলেও বিদ্যালয়ের ফলাফল বরাবরই ভাল। আক্ষেপ প্রকাশ করে তিনি বলেন, শ্রেণীকক্ষ না থাকার কারণে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিলে অনেক শিক্ষার্থী গরমের দিনে সুর্যের তাপে এবং বাহিরের ধুলাবালির কারণে অসুস্থ হয়ে যায়। তাই অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে নিয়মিত আসে না। বর্ষাকালে বৃষ্টি হলে প্রাক-প্রাথমিক(শিশু) ও দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ক্লাস করানো সম্ভব হয় না তাদেরকে ছুটি দিতে হয়। এতে অত্র এলাকার অনেক শিশু প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রাক-প্রাথমিক ও দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাএ ছাত্রীদের সাথে কথা বললে তারা জানায়, বাইরে ক্লাস করার সময় রোদ গরমের মধ্যে ক্লাস করতে হয়। বৃষ্টির দিন বেশী বাতাস আসলে আমাদের অনেক ভয় করে। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আনোয়ার হোসেন জানান, নতুন ভবনের জন্য আমরা উপজেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ববরাবর আবেদন দিয়েছি যাতে পরিত্যক্ত ভবনটি অপসারণ করে দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণ করার জন্য এবং কোমলমতি শিশুদের জন্য নতুন ভবন নির্মানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও শিক্ষামন্ত্রীর সু-দৃষ্টি কামনা করেন।
এ ব্যাপারে গৌরীপুর প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, শফিকুল ইসলামের কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, যে সব স্কুল জরাজীর্ণ এবং শ্রেণী কক্ষ সংকট আছে তাদের তালিকা মন্ত্রনালয়ে পাঠিয়েছি পর্যায়ক্রমে কাজ হবে।
ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com