ময়মনসিংহের গৌরীপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, শহীদ হারুণ স্মৃতি পরিষদের সভাপতি, ৬৯’ গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হকের (৭২) রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
বুধবার (১৫ মে) দুপুর ২ টা ১৫ মিনিটে গৌরীপুর পৌর শহরে নুরুল আমিন খান উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাযার পর গার্ড অব অনার প্রদান শেষে মরহুমের মরদেহ দাপুনিয়া এলাকায় পৌর গোরস্থানে দাফন করা হয়।
মরহুমের কফিনে সালাম প্রদর্শন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি, সহকারি কমিশনার (ভূমি) এএসএম রিয়াদ হাসান গৌরব ও গৌরীপুর থানার পুলিশ সদস্যরা।
এর আগে মরহুমের কফিনে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুর রহিম ও ডেপুটি কমান্ডার নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরাসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ মঙ্গলবার (১৪ মে) রাত ১০ টায় গৌরীপুর শহরের স্টেশন রোড এলাকায় নিজ বাসায় ফজলুল হক মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না……রাজেউন)। মৃত্যুকালে তিনি ১ স্ত্রী, ১ ছেলে, ৫ মেয়ে, নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
ফজলুল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি, ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসূফ খান পাঠান, গৌরীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন খান, গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার, সাবেক মেয়র হাবিবুর রহমান, গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডাঃ হেলাল উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক বাবু বিধু ভূষণ দাস, গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম, নাজিম উদ্দিন, গৌরীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুল ইসলাম মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান কাউসার, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি আবুল ফজল মুহম্মদ হীরা, সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ, পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক উজ্জল চন্দ্র প্রমুখ।
ফজলুল হক ১৯৪৭ সনে জন্মগ্রহন করেন। তার বাবা মরহুম মৌলভী জলফু মিয়া ও মা মোছাঃ আনোয়ারা বেগম। ফজলুল হক ৬৬’র ৬ দফা, ৬৯’র গনঅভ্যূত্থান, ৭০’র নির্বাচন, ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ করে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
ছোটবেলা থেকে তিনি ছিলেন রাজনৈতিক সচেতন। সপ্তম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় গৌরীপুর ছাত্রলীগের সভাপতি নিবার্চিত হন। ৬৬ তে বাংলার মুক্তির সনদ বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলনের সপক্ষে চোঙা ফুকিয়ে প্রচারাভিযান চালান তিনি। ৬৯ সনে গৌরীপুর কলেজে ভিপি নিবার্চিত হন তিনি।
এ সময় আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাঙ্গালী জাতির স্বাধীকার আন্দোলনের মহান নেতা মুজিবকে গ্রেফতার করলে সারা দেশের ন্যায় গৌরীপুরে শুরু হয় ছাত্র আন্দোলন। প্রতিদিন গৌরীপুরে মিছিল ও স্লোগানে মুখরিত হতো। প্রতিদিনের মত ২৭ জানুয়ারি ভিপি ফজলুল হকের নেতৃত্বে যথারিতি মিছিল বের হলে মিছিলটি মধ্যবাজারে আসলে পুলিশ মিছিলের উপর গুলি ছুড়ে। এতে গৌরীপুর কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র আজিজুল হক হারুণ শহীদ হন।
২৭ বছর বয়সে ফজলুল হক দেশমাতৃকাকে রক্ষার জন্য মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। ভারতের তোরায় প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ২৯ দিন অস্ত্র চালনা প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। ১১ নং সেক্টরের অধীনে কোম্পানি কমান্ডার তোফাজ্জল হোসেন চুন্নুর নির্দেশনার জন্য সদা সর্বদা এসএলআর নিয়ে প্রস্তুত থাকতেন। যুদ্ধে প্লাটুনের ডেপুটি কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
স্বাধীনতা যুদ্ধের পর গৌরীপুর কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন ফজলুল হক। ১৯৭২ সনে ছাত্ররাজনীতি থেকে বিদায় নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের গৌরীপুর শাখার সভাপতি ও ১৯৮১ সালে গৌরীপুর থানা আওয়ামীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে স্নেহ করতেন।


ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com