ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলায় পূর্ব শত্রুতার জেরে নুরুজ্জামান জনি (৩২) নামে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী নূরু মিয়া (৪৫) ও তার সহযোগীরা। শুক্রবার (১৭ মে) রাত ৮টার দিকে গৌরীপুরের মাওহা ইউনিয়নের নহাটা বাজারে এ ঘটনাটি ঘটে।
এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় রবিবার সন্ধ্যার পর নাম উল্লেখসহ ১৭ জন ও অজ্ঞাতনামা ৬ জনকে আসামী করে গৌরীপুর থানায় মামলা করেন নিহত যুবকের মা মোছাঃ দেলোয়ারা খাতুন ঝর্ণা।
এদিকে কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
স্থানীয় সুত্র ও পুলিশ জানায়, নিহত জনি হচ্ছেন উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের কুমড়ী গ্রামের মৃত সিদ্দিকুর রহমান মাস্টারের একমাত্র পুত্র। পাঁচ বছর আগে তার বাবা মারা যান। এ অবস্থায় ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে ভাল কোনো চাকরি জোটাতে পারেননি। ফলে স্থানীয় একটি বেসরকারী সংস্থায় চাকুরি করতেন। পাশপাশি সরকারের ন্যাশনাল সার্ভিসেও কাজ করেছেন। এসব করে যা আয় হতো তা দিয়েই বিধবা মাকে নিয়ে সংসার চালাতেন।
অন্যদিকে এলাকার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনেরও নেতৃত্ব দিতেন। সেই সাথে ছিলেন উপজেলার মাওহা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক। বিশেষ করে এলাকায় মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন জনি। এ কারণে এক মাদক ব্যবসায়ী মিথ্যা মামলায় তাঁকে ফাঁসিয়েও দেয়।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, উপজেলার নহাটা গ্রামের মৃত আজিম উদ্দিনের ছেলে মো. নুরু মিয়া এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। নুরু মিয়ার নেতৃত্বে কিছু তরুণ ও যুবক মাদক ব্যবসা করতো। এ নিয়ে জনি প্রায়ই বাধা দিতেন এবং তার মাদক ব্যবসা নিয়ে এলাকায় প্রতিবাদ করতেন। এ ঘটনা নিয়ে জনি ও নুরুর মধ্যে বিবাধের সৃষ্টি হয়। বছর খানেক আগে মাদক ব্যবসায়ী নুরু মিয়া জনিকে একটি মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। এর মধ্যে মাদক ব্যবসায়ী নুরুকে বেশ কয়েকবার পুলিশ গ্রেফতার করলে সকল দোষ চাপে জনির ওপর। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে জনিকে প্রকাশ্যে দেখে নেওয়ারও হুমকী দিতো নূরু মিয়া।
গত শুক্রবার ইফতারের পর নুরুজ্জামান জনি বাড়ি থেকে বের হয়ে নহাটা বাজারে রোকন মিয়ার চায়ের দোকানে বসেন। এ সময় নুরু মিয়ার নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের একটি সশস্ত্র দল জনিকে সুজন মাহমুদের কম্পিউটারের দোকানের সামনে ডেকে নেয়। সেখানে যাওয়ার পর সশস্ত্র দলটি জনির ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। হামলাকারীরা জনির বুক ও মুখে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। প্রাণ বাঁচাতে তিনি দৌঁড়ে বাজারের কাছে খোকন মিয়ার পুকুর পাড়ে গিয়ে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যান জনি। স্থানীয় লোকজন তাকে সেখান থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক জনিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
নিহত জনির মা ঝর্ণা বলেন, ‘আমার তো সবই গেল। অহন তো কিছুই নাই। আমি কারে লইয়্যা বাচবাম। আমি এরার (খুনিদের) বিচার কি দেইখ্যা যাইতাম পারবাম?
মাওহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রমিজ উদ্দিন স্বপন বলেন, নিহত জনি ছিলেন এলাকার একজন প্রতিবাদী যুবক। সকল অন্যায় অবিচারে তাঁর ভুমিকা ছিল অত্যন্ত কার্যকর। হত্যাকারী নুরু মিয়ার বিরুদ্ধে সকল সময়ই জনি ছিল প্রতিবাদী। সেই কারনেই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।
গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। অচিরেই খুনিদের দৃশ্যমান করা হবে। সেই লক্ষ্যেই তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com