ময়মনসিংহরবিবার , ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রিকশা চালিয়ে লেখাপড়া ও পরিবারের খরচ যোগান শাহজালাল

মশিউর রহমান কাউসার
ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯ ৩:২৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়া করার প্রবল ইচ্ছা মোঃ শাহজালালের (২০)। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তাঁর স্বপ্ন পূরণে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় দ্রারিদ্রতা। পরিবারের খরচ মিটিয়ে লেখাপড়ার খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে তাঁর হতদরিদ্র বর্গাচাষী বৃদ্ধ বাবার পক্ষে। এদিকে নিজের স্বপ্ন পূরণে অনঢ় শাহজালাল সিদ্ধান্ত নেন যেকোন মূল্যেই লেখাপড়া চালিয়ে যাবেন তিনি। এ লক্ষ্যে ৫ম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে শিশু বয়সেই চেপে ধরেন প্যাডেল রিকশার হ্যান্ডেল। সেই থেকে স্কুলে নিয়মিত ক্লাস করার ফাঁকে ফাঁকে রিকশা চালিয়ে পরিবারের ও লেখাপড়ার খরচ যুগিয়ে আসছেন তিনি। রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে তিনি বর্তমানে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ফাজিল মাদ্রাসার ফাজিল (স্নাতক) ১ম বর্ষের ছাত্র।

শাহজালাল উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের বাঘবের গ্রামের মোঃ তারা মিয়ার (৮০) ছেলে। মা আলপনা বেগম একজন গৃহিণী। চার ভাই ও তিন বোনের মাঝে শাহজালাল ৩য় সন্তান। গৌরীপুর পৌর শহরে রিকশা চালাতে চালাতে এ প্রতিবেদকের কাছে নিজের জীবন সংগ্রামের কাহিনী তুলে ধরেন শাহজালাল।

তিনি বলেন, ৫ম শ্রেনিতে পড়া অবস্থায় একটি এনজিও থেকে ঋন নিয়ে প্যাডেল রিকশা কিনে দেন তাঁর বাবা। এরপর থেকে তিনি স্কুলে ক্লাস শুরুর আগে ও ক্লাস শেষে এবং ছুটির দিনে রিকশা চালাতেন। সারাদিন রিকশা চালিয়ে যা আয় রোজগার হত তা দিয়ে ঋনের কিস্তি পরিশোধ করে পরিবারের ও নিজের লেখাপড়ার খরচ মেটাতেন তিনি। এভাবে প্রতিদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে কিল্লা বোকাইনগর ফাজিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল (এসএসসি) ও আলিম (এইচএসসি) পাস করে তিনি বর্তমানে একই মাদ্রাসায় ফাজিল (স্নাতক) ১ম বর্ষে অধ্যয়নরত।

শাহজালাল আরো বলেন, তাঁর ৮০ বছরের বৃদ্ধা বাবা ও বৃদ্ধা মা বর্তমানে শারীরিকভাবে অক্ষম। তাঁর অপর তিন ভাই (অটো রিকশা চালক) নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। তিন বোনের মাঝে এরই মধ্যে একজনকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই বৃদ্ধ বাবা-মায়ের ভরন পোষণ ও ছোট দুই বোনের লেখাপড়ার খরচ তাকেই বহন করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আগে প্যাডেল রিকশা চালিয়ে আয় খুব কম হত। এখন তিনি এনজিও থেকে পুনরায় ঋণ নিয়ে ইঞ্জিন চালিত রিকশা কিনেছেন। বর্তমানে তিনি প্রতিদিন ৫শ থেকে ৭শ টাকা আয় করে থাকেন। এই আয় থেকে ঋনের কিস্তি পরিশোধ করে পরিবার ও নিজের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে হীমশিম খাচ্ছেন তিনি। এসময় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শাহজালাল বলেন এভাবে আর কতদিন। নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন করেন, আমি কি পারব আমার স্বপ্ন পূরণ করতে।

লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মাদ্রাসা কল্যাণ তহবিল থেকে তাঁকে সাহায্য দেয়া হয় কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর তাঁর ক্লাস ও পরীক্ষাসহ অন্যান্য ফি অর্ধেক মওকুফ করে দেন। কিন্তু সেটা দিয়ে তাঁর সমস্যা সমাধান হয়না।

নিজের জীবনের স্বপ্ন সম্পর্কে শাহজালাল বলেন, তিনি শিক্ষা জীবন শেষে চাকুরি করে নিজের পরিবারের অভাব মেটাতে চান। তাঁর জীবন যুদ্ধে সফলতা অর্জনের জন্য প্রশাসনসহ সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

    ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com