ঢাকামঙ্গলবার , ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন

ইমতিয়াজ আহমেদ তানসেন
সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৩ ১:৪৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সংস্কৃতি হলো একটি জাতির সামগ্রিক মানসিকতার ইতিবাচক প্রকাশরূপ যা রেখাপাত করে জাতির জীবনব্যবস্থায়। সংস্কৃতি তুলে ধরে জাতির স্বাতন্র স্বকীয়তাবোধ। জাতির জীবনাচার, রীতিনীতি, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, চিন্তাচেতনা, নিজস্ব ইতিহাসের বহি:প্রকাশ ঘটে সংস্কৃতির মাধ্যমে। সংস্কৃতি হলো উন্নত জাতিগঠনের অন্যতম মাধ্যম। সংস্কৃতির মাধ্যমেই ফুটে উঠে একটি জাতির মানসিক প্রকাশ। যে জাতি সংস্কৃতিগতভাবে যত উন্নত সে জাতির মানসিক বিকাশও তত উন্নত।

সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে সাংস্কৃতিক আন্দোলন। সচেতন গণসাংস্কৃতিক কর্মি সংগঠকরা জাগিয়ে তুলে জাতিকে। অতীতে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বিভিন্ন লড়াই সংগ্রামে সাংস্কৃতিক কর্মীদের সরব উপস্থিতি এর চাক্ষুষ প্রমাণ। বর্তমানেও গণসংস্কৃতিতে বিশ্বাসী সচেতন সাংস্কৃতিক কর্মীরা রাজপথে সরব হয়। অন্যায়, অপরাধ, সমাজ, জাতি ধ্বংসকারী, ইতিহাস বিরোধী ইত্যাদি অপকর্মের বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিবাদমূখর হয়। জাগিয়ে তোলার প্রয়াস চালায় গণমানুষকে। অপচক্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানায়। ডাক দেয় প্রতিরোধের। দাবী তুলে সরকারের নিকট।

সাংস্কৃতিক আন্দোলন কখনো রাজনৈতিক আন্দোলনের মত পূর্ব পরিকল্পনা ও কর্মসূচী অনুয়ায়ী গড়ে উঠে না। বিষয় ও পরিস্থিতি নির্ধারণ করে সে বিষয়ে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে উঠে। আবার গতানুগতিক সাংস্কৃতিক কর্মি সংগঠকদের দ্বারা সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে উঠে না। সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে উঠে গণসংস্কৃতিতে বিশ্বাসী সাংস্কৃতিক কর্মি সংগঠকদের দ্বারা। যারা মনে করে জাতির কোন মৌলিক বিষয়ে লক্ষ্য পূরণের জন্য ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনের কোন বিকল্প নেই। অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সরব থাকে বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন কর্মসূচী কর্মকান্ডের মাধ্যমে।

কোন বিষয়ে গড়ে উঠা সাংস্কৃতিক আন্দোলনের রুপ কেমন হবে তা নির্ভর করে ঐ বিষয় এবং যে সংগঠন সাংস্কৃতিক আন্দোলন করে তুলে সে সংগঠনের কর্মি সংগঠকদের কর্মপরিকল্পনার উপর। বিষয় ও কর্মপরিকল্পনার উপর ভর করে গড়ে উঠে সাংস্কৃতিক আন্দোলন। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের রুপ বুঝাতে উদাহরণ হিসেবে ময়মনসিংহে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে ২০১৬/২০১৭ সালে স্থানীয়ভাবে সংগঠিত সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হলো। ময়মনসিংহ শহরে তৎকালীন অন্বেষা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করা হতো। তাদের সকল নথিপত্রে প্রতিষ্ঠানের নামের নিচে লেখা থাকত “Dedicated to the memory of Shaheed Governor Abdul Monem Khan, H. Pk”. মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী পাকিস্তানের দালাল মোনেম খানকে উল্লেখ করা হতো শহীদ হিসেবে। প্রতিষ্ঠানটিতে বিরাজমান ছিল পাকিস্তানী ভাবধারা। পাকিস্তানী ভাবধারার আলোকেই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হতো। সুক্ষভাবে মগজধোলাই করা হতো অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের। মোনেম খানের নিহত হওয়ার প্রকৃত ঘটনা ছিল, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে পাকিস্তানের দালালী করার কারণে মুক্তিযোদ্ধারা ১৩’অক্টোবর ১৯৭১ তারিখে গুলি করে হত্যা করে।

অন্বেষা কর্তৃক মহান ইতিহাস বিকৃতির সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশের পর গণসাংস্কৃতিক সংগঠন সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘ মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির প্রতিবাদে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সমাজ রূপান্তর ০৮ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মানববন্ধন করে। তারপর ‘ইতিহাস বিকৃতি রুখে দাঁড়ান’ শিরোনামে লিফলেট চাপিয়ে ময়মনসিংহ শহরে বিলি করে। ইতিহাস বিকৃতির ঘটনা তুলে ধরে রচনা করে নাটক ‘একাত্তরের খান’। নাটকটি ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মঞ্চায়ন করে ময়মনসিংহ শহরের ছোটবাজার মুক্তমঞ্চে।সর্বোপরি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিহাস বিকৃতির বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে দীর্ঘদিন ধারাবাহিক প্রচারণা চালায়। উল্লেখ্য, ইতিহাস বিকৃতির কারখানা ‘ অন্বেষা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও কলেজ’ বর্তমানে নেই। সরকার কর্তৃক ২২ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে ইতিহাস বিকৃতির কারখানা অন্বেষা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও কলেজ বন্ধ করা হয়েছে।

সংস্কৃতি শুধু মঞ্চ বা ক্যামেরাকেন্দ্রিক গান, নাটক, নাচ ইত্যাদির মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। সংস্কৃতির অন্যতম রুপ হচ্ছে সাংস্কৃতিক আন্দোলন। জাতির মৌলিক বিষয়ের একান্ত প্রয়োজনে গণসাংস্কৃতিক কর্মি সংগঠক বা সাংস্কৃতিক সংগঠনকে সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হয়। এটা দায়িত্ব ও কর্তব্যও বটে। একটি দেশে যত সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে উঠবে সে দেশের সমাজে তত সুস্থ ধারা বিরাজ করবে। তাই আমাদের সবুজ শ্যামল বাংলাদেশে জাতির স্বার্থে জাতির বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ে গড়ে উঠুক সাংস্কৃতিক আন্দোলন।

 

গৌরীপুর নিউজ/এইচএসএস 

 

প্রিয় পাঠক আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর,খবরের পিছনের খবর সরাসরি জানাতে যোগাযোগ করুন। আপনার তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।

মোবাইলঃ +8801717-785548, +8801518-463033

ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com