ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ইয়াসিন মিয়া ওরফে শরীফ (১৭) নামে স্থানীয় এক কলেজ ছাত্রকে তুচ্ছ ঘটনায় প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার (২৫ অক্টোবর) সকাল পৌনে দশটার দিকে উপজেলার সিধলা ইউনিয়নের মনাটি গ্রামে স্থানীয় মনাটি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।
নিহত কলেজ ছাত্র মনাটি গ্রামের রিক্সা চালক সবুজ মিয়ার ছেলে ও শ্যামগঞ্জ হাফেজ জিয়াউর রহমান ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেণির ১ম বর্ষের ছাত্র।
এ হত্যাকান্ডে জড়িত মূল ঘাতক একাধিক মামলার আসামী স্থানীয় এরশাদ (৪০) নামে এক ব্যক্তিকে রক্তমাখা ছুরিসহ আটক করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাহমুদুল হাসান।
স্থানীয় কয়েকজন জানান- ঘটনার সময় ইয়াসিন চুল কাটার জন্য স্থানীয় মনাটি বাজারে একটি সেলুনে যাচ্ছিল। এসময় মনাটি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তায় ইয়াসিনের বুকের পাজরে অতর্কিতে ছুরিকাঘাত করে মৃত হাসিম মিয়ার ছেলে প্রতিবেশী এরশাদ। পরে ঘটনাস্থল থেকে আহত ইয়াসিনকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। তারা আরও বলেন- এরশাদ এলাকার একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার ভয়ে এলাকার লোকজন আতংকে থাকত। এরশাদের বিরুদ্ধে গৌরীপুর থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
খবর পেয়ে গৌরীপুর থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত মূল ঘাতক এরশাদ মিয়াকে রক্তমাখা ছুরিসহ আটক করে।
নিহতের পরিবারের কয়েকজন সদস্য জানান- প্রায় এক সপ্তাহ আগে এরশাদের সঙ্গে পাশর্^বর্তী দড়িপাড়া এলাকার কতিপয় লোকজনের সঙ্গে বিরোধ ঘটে। এসময় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে পক্ষ না নেয়ায় ইয়াসিনের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়েছিল এরশাদ। ক্ষুব্দ এরশাদ তখন ইয়াসিনের বাড়ি-ঘরে হামলাও করেছিল। তাদের দাবি এ বিরোধের জের ধরেই ইয়াসিনকে হত্যা করা হয়েছে।
নিহতের মা গৃহপরিচারিকা তিন সন্তানের জননী শরিফা আক্তার বলেন- ‘ইয়াসিন আমার একমাত্র ছেলে। সে সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে চাকুরি জন্য আবেদন করেছিল। তুচ্ছ ঘটনায় ঘাতকরা আমার ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমি হত্যাকান্ডে জড়িতদের ফাঁসি চাই।’
নিহতের কয়েকজন সহপাঠী জানান- ইয়াসিন একজন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। তার স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীর একজন সৈনিক হওয়ার। তার এমন নৃশংস হত্যাকান্ড মেনে নিতে পারছিনা।
এ হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন গৌরীপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ সুমন মিয়া।
গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মাহমুদুল হাসান জানান- এ হত্যাকান্ডে জড়িত মূলহোতা এরশাদকে রক্তমাখা ছুরিসহ আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে ইয়াসিন হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের পরিবারের সদস্যদের মাঝে বইছে শোকের মাতম। এ নৃশংস হত্যাকান্ড মেনে নিতে পারছেনা ইয়াসিনের সহপাঠী, শিক্ষক ও স্থানীয় লোকজন। তারা ঘাতকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে আজ রাত ৯ টায় জানাযার নামাজের পর ইয়াসিনের মরদেহ তার পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com