অনুমোদনহীন ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত যান এখন ময়মনসিংহ নগরবাসীর গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। অনুমোদনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি থাকা এসব যান দিনরাত সড়কে ছোটাছুটি করছে। এতে সড়কে যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। বিভিন্ন সময় ছোটবড় দুর্ঘটনাও ঘটছে।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশন এলাকায় অনুমোদিত ইজিবাইক রয়েছে ৭ হাজার। ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে ১২ হাজার, যার মধ্যে চার ব্যাটারির মোটা চাকার রিকশা ৫ হাজার ৬০০টি। বাকিগুলো ৩০ অ্যাম্পিয়ার ব্যাটারির চিকন চাকার রিকশা-ভ্যান। এ ছাড়া ইজিবাইকগুলোর মধ্যে অনেকে ৬ ব্যাটারিও ব্যবহার করেন। সিটি করপোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী অনুমোদিত ইজিবাইক লাল-সবুজ রঙ অনুযায়ী একদিন পর পর চলাচল করে। চিকন চাকার রিকশাগুলো প্রতিদিন চললেও মোটা চাকার আকাশি ও হলুদ রঙের রিকশাগুলো একদিন পর পর চলাচল করে। তবে নগরীতে ব্যাটারিচালিত এসব যানের সংখ্যা সিটি করপোরেশনের হিসাবের কয়েকগুণ বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইজিবাইকগুলো জোড় ও বিজোড় সংখ্যায় ভাগ হয়ে একদিন পরপর চলাচল করার নিয়ম। জোড় ও বিজোড় সংখ্যায় ভাগ করা ইজিবাইকগুলো লাল ও সবুজ রঙে চিহ্নিত। এক্ষেত্রে অনেক চালকই নিয়ম মানেন না। তারা প্রতিদিন এসব যান চালান। আবার অনেকেই রাতারাতি ইজিবাইকের রং বদলে ভুয়া নম্বর ব্যবহার করে চালাচ্ছেন। এ কারণে নগরের বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
চালকরা জানান, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নাম ছাড়াও মেসার্স গণি এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স প্রাচী এন্টারপ্রাইজ নামের রশিদ ধরিয়ে দেয় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকরা। ঐসব রশিদে লেখা থাকে সিটি কর্পোরেশনের ইজারাপ্ত ইজারাদার। রশিদে লেখা নির্ধারিত পরিমাণ টাকা না দিলে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকরা অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। অপমান-অপদস্ত করে। মাঝেমধ্যে গাড়ির চাবিও ছিনিয়ে নেয় তারা। বাধ্য হয়ে তখন টাকা দিতে হয়।
ইজিবাইকচালক জামাল মিয়া বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন পয়েন্টে চাঁদা দিয়ে গাড়ি চালাতে হয়। টাকা নেয়ার সময় একটি রশিদ দেওয়া হয়। টাকা না দিতে চাইলে অপমান-অপদস্ত করা হয়।
নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগের আহ্বায়ক আইনজীবী নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, যানজটের কারণে বর্তমানে ময়মনসিংহ নগরী বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ সমস্যা নিরসন না করা হলে দিন দিন মানুষ এই নগর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবে। তাই দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, যে পরিমাণ ইজিবাইক, মিশুক ও রিকশা চলাচল করে, তা ধারণ করার মতো পরিস্থিতি এই শহরের নেই। অবৈধ যানের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রতিদিন গাড়ি জব্দ করা হচ্ছে। আমাদের সামনে চাঁদাবাজি করার কোনো সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটু বলেন, সড়কে চাঁদাবাজির বিষয় আমার জানা নেই। যদি এমনটি হয়ে থাকে তাহলে জেলা পুলিশের সঙ্গে কাজ করে সিটি কর্পোরেশন তা বন্ধ করবে। এছাড়া অনুমোদনহীন যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাসুম আহম্মেদ ভূইয়া বলেন, শহরে যেসব ইজিবাইক অবৈধভাবে চলছে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর গাড়ি থেকে চাঁদাবাজি হলে সে বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জিএন/এইচ
ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com