ঢাকামঙ্গলবার , ১৪ মে ২০২৪

ময়মনসিংহে ১২ শ প্রসূতির নরমাল ডেলিভারি করিয়েছেন তিনি

অনলাইন ডেস্ক
মে ১৪, ২০২৪ ৯:১১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

ময়মনসিংহের অনেক ইউনিয়নেই ধাত্রী রয়েছে। যাদের বেশিরভাগেরই নেই প্রশিক্ষণ। তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নরমাল ডেলিভারিতে সন্তান প্রসব করাচ্ছেন। এর বিনিময়ে ধাত্রীরা দাবি করে নিচ্ছে না কোনো টাকা। যে যা খুশি হয়ে দেয়, তাই নেয়। অনেকে খুশি হয়ে উপহার দেয় শাড়ি। এতেই খুশি এসব ধাত্রী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন এলাকায় থাকা ধাত্রীদের বেশিরভাগই বয়ষ্ক। অনেকে বয়সের ভারে ধাত্রী হিসেবে প্রসূতি নারীদের নরমাল ডেলিভারিতে সন্তান প্রসবের কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে বাধ্য হয়ে অনেকে সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। যেসব ধাত্রী প্রসূতি নারীসহ বাচ্চার কোনো ধরনের জটিলতা ছাড়া সন্তান প্রসব করাচ্ছেন, তারা এসব প্রসূতি নারীদের আস্থার জায়গায় পরিণত হয়েছেন।

নাগরিকরা জানান, প্রসবের দিন যত এগিয়ে আসে, ততই দুশ্চিন্তা বাড়ে প্রসূতি নারীদের। অনেকে সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা জন্ম দিতে চাইলেও বহু নারী ধাত্রীকেই একমাত্র ভরসা হিসেবে মনে করেন। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের বেশিরভাগ প্রসূতি নারীরা নরমাল ডেলিভারিতেই বাচ্চা জন্ম দিচ্ছে। এতে সুনাম কুড়াচ্ছেন এসব ধাত্রীরা। তবে প্রশিক্ষিত ধাত্রীর অভাবে প্রসূতি নারীসহ বাচ্চা ঝুঁকিতে থাকছেন।

জেলার নান্দাইল উপজেলার পালাহার গ্রামের ধাত্রী সাফিয়া আক্তার (৬৯)। তিনি একজন প্রশিক্ষিত ধাত্রী। তিন যুগের বেশি সময় ধরে গ্রামের নারীদের সন্তান প্রসবে সহায়তা করেন। এ জন্য তিনি কোনো পারিশ্রমিক নেন না। আপদ-বিপদ, ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও ছুটে যান প্রসূতি নারীদের সমস্যায়। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের কাছে সাফিয়া নামটি ভরসার জায়গায় পরিণত হয়েছে।

সাফিয়া আক্তার জানান, তিন যুগ আগে মুশুলী ইউনিয়ন পরিষদে তিন মাস ধাত্রীবিদ্যায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। পরে জেলা শহরে একটি এনজিওর উদ্যোগে ১৫ দিনের আরেকটি প্রশিক্ষণ দেন তিনি। তখন নিজের এলাকায় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সহায়তা করতে থাকেন। এখনও তিনি সেই কাজ করে চলেছেন। তার হাতে ১২ শতাধিক নবজাতকের জন্ম হয়েছে। প্রসূতি নারীদের সঙ্গে সাফিয়ার রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই। সন্তান জন্মের সময় সহায়তা করার কারণে সাফিয়ার সঙ্গে এসব নারীদের আত্মিক বন্ধন গড়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সন্তান প্রসবে সহায়তা করি। কোনো জটিলতা দেখা দিলে প্রসূতিকে সরাসরি সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই। তবে বেশিরভাগ ধাত্রীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। ফলে তারাও নিজেদের অভিজ্ঞতায় নরমাল ডেলিভারিতে বাচ্চা প্রসব করালেও অনেক ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে পড়ে প্রসূতি নারীসহ সন্তান। তাই সব ধাত্রীদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা প্রয়োজন।

পালাহার গ্রামের মর্জিনা খাতুন বলেন, সাফিয়া আক্তারকে কেউ চাচি, কেউ খালা, আবার কেউ দাদি বলে সম্বোধন করেন। তার হাতে অনেক বাচ্চার জন্ম হয়েছে। এর বিনিয়মে তিনি এক টাকাও দাবি করেন না। যে যা খুশি হয়ে দেন, তাই নেন। তবে বেশিরভাগ প্রসূতি নারীর পরিবার শাড়ি উপহার দেন।

জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন কালাম বলেন, ধাত্রীরা দীর্ঘদিন ধরে নরমাল ডেলিভারিতে সফলতার সঙ্গে বাচ্চা প্রসব করাচ্ছেন। এতে বেশিরভাগ প্রসূতি নারীরা তাদের প্রতি আস্থা রাখেন। ধাত্রীদের তালিকা করে সরকারিভাবে প্রশিক্ষণের আওতায় আনলে আরো ভালোভাবে নরমাল ডেলিভারি করাতে পারতেন তারা। এতে প্রসূতি নারীরা আরো বেশি ঝুঁকিমুক্ত হতো।

ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ধাত্রীদের দ্বারা যদি মাতৃমৃত্যু বা শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটে তাহলে এটা অপরাধের শামিল। কিন্তু তারা ভালোভাবে ডেলিভারি করিয়ে সুনাম অর্জন করেছেন। তাদেরকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

 

জিএন/এইচ

    ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com