ঢাকারবিবার , ১৪ জুলাই ২০২৪

জামিনে মুক্ত হয়ে প্রধান আসামি বললেন, ‘জেলে এক বছরে খরচ পাঁচ লাখ’

অনলাইন ডেস্ক
জুলাই ১৪, ২০২৪ ১২:৩১ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

এক বছর ২৩ দিন কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হয়েই সাংবাদিক গোলাম রব্বানি ওরফে নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম ওরফে বাবু বলেছেন, এক বছরের উপরে জেলে ছিলাম। জেলখানায় ৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এরমধ্যে সাড়ে চার লাখ টাকা দিয়েছে সাধুরপাড়ার গরিব মানুষ। এবারের মাননীয় সংসদ সদস্য মো. নূর মোহাম্মদ সাহেব, উনি অত্যন্ত ভালো লোক। আমার সঙ্গে জেলে অনেকবার কথা হয়েছে। আমার ইউনিয়নের রাস্তাঘাটের কথা বলেছে। বাবু তুমি বের হয়ে আসো, এ মামলা মীমাংসা করে দেব।

বাবু চেয়ারম্যানের এই বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। বুধবার (১০ জুলাই) রাতে কারাগার থেকে বেরিয়ে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের কেবি মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এক সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

ভিডিওতে বাবুকে বলতে শোনা যায়, ১৭ জুন আমি অ্যারেস্ট হয়েছিলাম পঞ্চগড় আমার নানার বাড়ি থেকে। আপনারা জানেন, এই মামলা নিয়ে অনেকেই অনেক মন্তব্য করেছে…। জেলখানা ভালো জায়গা না। আমি দীর্ঘ এক বছরের উপরে ছিলাম। আমি আসলে অনেক কষ্ট করেছি। অনেক গরিব মানুষ ২০০-৩০০ টাকা দিয়ে আমাকে দেখে আসছে। আপনাদের এ কথা আমি সারাজীবন মনে রাখব। জেলাখানায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকলে, তার সাড়ে চার লাখ টাকা সাধুরপাড়ার গরিব মানুষ দিয়েছে।

ওইদিন বিকেলে হাইকোর্ট জামিন আবেদন মঞ্জুর করায় মাহমুদুল আলম বাবু এক বছর ২৩ দিন কারাভোগের পর জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান। কারাগার থেকে বের হয়েই কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বিশাল শোডাউন করে নিজ গ্রামে ফিরে জনসভায় যোগ দেন তিনি।

মাহমুদুল আলম বাবু সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। একইসঙ্গে তিনি সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত এবং আওয়ামী লীগের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে কথা বলতে সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামি মাহমুদুল আলম বাবুর মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

জামালপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, জেলাখানায় বেআইনি সহযোগিতায় তিনি রাজকীয় জীবনযাপন করেছে। বক্তব্যে তাই প্রমাণ করে। অপরাধী যদি জেলখানায় বেআইনি সহযোগিতা পায় তাহলে তো অপরাধ দিন দিন বেড়েই যাবে।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. ইউসূফ আলী বলেন, ‘বক্তব্যের মাধ্যমে বুঝা যায় তিনি জেলখাখায় রাজকীয় জীবনযাপন করছেন। অনৈতিক ও বেআইনিভাবে তাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই মামলা তিনি প্রভাবিত করতে পারেন। জেল থেকে বের হয়েই এলাকায় গিয়ে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে মামলার ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।’

এ ব্যাপারে জামালপুর কারাগারের জেলার আবু ফাতাহ্ বলেন, ‘এখানে এতো টাকা খরচ করার কোনো সুযোগ নেই। আর বাবু চেয়ারম্যান সাধারণ বন্দিদের মতোই ছিলেন। সাধারণ ওয়ার্ডে ফ্লোরে ঘুমিয়েছেন। জেলখানার খাবার খেয়েছেন। তিনি যা বলেছেন সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তার বক্তব্যের বিষয়ে নিহত সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিমের মেয়ে রাব্বীলা-তুল-জান্নাত বলেন, ‘তিনি তো জেলখানায় রাজকীয় জীবনযাপন করেছেন। যে ব্যক্তির জেলখানায় একবছরে পাঁচ লাখ টাকা লাগে, তার জেলখানা আর বাইরে একই কথা। তাকে বেআইনিভাবে জেলাখানায় সহযোগিতা করা হয়েছে। বাবা হত্যার এক বছর পার হয়েছে। প্রধান আসামি জামিনে জেল থেকে মুক্ত হয়েই উত্তেজনাকর বক্তব্য দিচ্ছেন। মামলায় নাকি তার (মাহমুদুল) আর কোনো সমস্যা হবে না। বিচার পাওয়া নিয়ে সন্দেহ হয়। প্রধান আসামি জেল থেকে বের হওয়ায় আমরা আতঙ্কগ্রস্ত।

জানা যায়, নিহত সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধি ও একাত্তর টেলিভিশনের বকশীগঞ্জ উপজেলার প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি ওই উপজেলার নিলক্ষিয়া ইউনিয়নের গোমের চর গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে।

 

জিএন/এইচ

    ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com