প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য পদে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে ময়মনসিংহের গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের স্থানীয় ছাত্র-জনতা। বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বেলা ১১ টার দিকে তালা ঝুলানোর পর তারা এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন।
আন্দোলনকারীদের কয়েকজন জানান- নিয়োগ কমিটির সংশ্লিষ্টরা বিদ্যালয়ের ফাঁকা (তথ্যউপাত্তবিহীন) ওয়েব সাইড বানিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগে প্রায় অর্ধকোটি টাকা লুটে নিয়ে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। দেশে যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলছে, সেই সময়ে এখানে মেধা নয়, টাকার খেলা হয়েছে। এ নিয়োগ বাতিল চান তারা।
তারা আরও জানান- এ বিদ্যালয়ে একের পর এক অনিয়ম হয়েছে। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটিতে সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. এনামুল হক সরকারকে দুর্নীতির মাধ্যমে বিদ্যুৎসাহী সদস্য করা হয়েছে। এসব অবৈধ কমিটি অনুমোদনের সঙ্গে জড়িত ময়মনসিংহ শিক্ষাবোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদেরও অপসারণের দাবি করেন তারা।
গৌরীপুর বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক শামসুজ্জামান দুর্জয় সাংবাদিকদের জানান- যেখানেই দুর্নীতি-অনিয়ম হবে সেখানেই তাদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ চলবে।
চাকুরী বঞ্চিত মো. রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান- নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন নিয়োগ কাঠামো অনুযায়ী হয়নি। এখানে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে।
নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব ও বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান- গত ৬জুন একটি জাতীয় ও একটি স্থানীয় পত্রিকার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রধান শিক্ষক পদে ১০ জন, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে ৪ জন ও নিরাপত্তা কর্মী পদে ৭ জন আবেদন করেন। তাদের মধ্যে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রধান শিক্ষক পদে ৫ জন, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে ৪ জন ও নিরাপত্তা কর্মী পদে ৫ জন পরীক্ষা দেন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হয়ে প্রধান শিক্ষক পদে মো. শফিকুল ইসলাম, কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে ইয়াসিন মোহাম্মদ আরাফাত ও নিরাপত্তা কর্মী পদে রফিকুল ইসলাম নিয়োগ পান। নিয়োগপত্র অনুযায়ী বুধবার প্রধান শিক্ষক পদে মো. শফিকুল ইসলাম যোগদান করেন। যোগদানের পরপরেই বিক্ষুব্দ লোকজন এসে অফিস কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় তারা অবৈধ নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান- যারা অভিযোগ করেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। নিয়োগ বিধিমালার বিধি-বিধান মেনে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, মহাপরিচালকের প্রতিনিধি’র উপস্থিতিতে তারাই প্রশ্ন করেছেন ও পরীক্ষা নিয়েছেন। মেধা যাছাইয়ের ভিত্তিতে যিনি প্রথম হয়েছেন, তাকেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্ত মো. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান- নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী মেধা যাছাইয়ে প্রথম হওয়ায় নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। টাকা লেনদেনের অভিযোগ মিথ্যা।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো. এনামুল হক সরকার সাংবাদিকদের জানান- তিনি এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কমিটির সদস্য সচিব থাকা অবস্থাতেই অবসরে যাওয়ার পর থাকে বিদ্যুৎসাহী সদস্য নির্বাচিত করার আগাম সিদ্ধান্ত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাকিল আহমেদ সাংবাদিকদের জানান- অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য ছাড়াও এই নিয়োগ বাতিলের স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন- ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য মো. হাবিবুল ইসলাম খান শহিদ, বিএনপি নেতা আরিফুল ইসলাম ভূইয়া, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা মহিলা দলের সভাপতি তানজীন চৌধুরী লিলি, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা যুবদলের সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম মিল্টন, কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক সাইদুল ইসলাম লিংকন, মৎস্য ও পশু বিষয়ক সম্পাদক মো. মোস্তফা কামাল, সদস্য মো. তাজ উদ্দিন ভূট্টো, উত্তর জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নুরুজ্জামান সোহেল, সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদুল ইসলাম ভূইয়া সোহেল, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মো. শাহীন আলম তারা, সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, ছাত্রনেতা তৌহিদুল ইসলাম জনি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য মেহেদী হাসান ও শিশির আহমেদ আপন।
ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com