কোটাবৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের আচমকা পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা-অগ্নিসংযোগ ও বেধড়ক মারধরে জ্ঞান হারাই। আন্দোলনকারীরা পুলিশ ফাঁড়ি ভবনের দুইটি দরজার ছিটকিনি আটকিয়ে ভেন্টিলেটরের ফাঁক দিয়ে আগুন দিয়ে আমাদের পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিলো। এসময় আত্মরক্ষার্থে আমরা শটগানে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ি। পাশাপাশি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা আন্দোলনকারীদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানাই এবং মুহূর্তেই আমরা অগণন আন্দোলনকারীদের মারধরের শিকার হই। উপুর্যপরি মাথায় আঘাতে বাঁচার আশায় শিক্ষঅর্থীদের কাছে প্রাণভিক্ষা চাই এবং প্রাণভয়ে সামনের রাস্তায় দৌড় দেই। একটু সামনে এগুতেই জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় পড়ে যাই । অর্পিত দায়িত্ব কিংবা আদরের সন্তান পলি (১৫) তুলি (৬) স্ত্রী নার্গিস বেগম সহ স্বজন-সংসারের কথা ভাববার সময় পাইনি তখন। তখন মনে হচ্ছিলো এই বুঝি নিভে গেলো জীবন প্রদীপ! জ্ঞান ফিরে দেখি আমি হাসপাতালের বিছানায় শোয়া, ডান হাত প্লাস্টার করা ও মাথায় সেলাই দিতে হয়েছে ৩৬টি।
(২ আগস্ট শুক্রবার) ময়মনসিংহের ঈশ^রগঞ্জ উপজেলার হারুয়া গ্রামের আবুল কালাম (৪৫) ঢাকার বাড্ডা পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত থাকা অবস্থায় আন্দোলনকারীদের মারধরে গুরতর আহত হওয়ার বর্ণনা দিচ্ছিলেন এভাবেই।
তিনি আরো জানান, পুলিশ ফাঁড়ির অদূরেই একটি বিশ^বিদ্যালয় (ইস্ট ওয়েস্ট) থাকায় মুহূর্তেই শিক্ষার্থীরা জড়ো হয় এবং কিছু বুঝে উঠার আগেই হামলা চালানো হয়।
জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হামলা-মারধরে মারাত্নক আহত হন পুলিশ কনস্টেবল আবুল কালাম। পরে তাকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালের ১০ তলায় ২ নম্বর ওয়ার্ডে ১৩ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৮ জুলাই আহতদের দেখতে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে যান। এসময় আহতদের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন এবং যথোপযুক্ত চিকিৎসার আশ^াসের পাশাপাশি এসময় উপস্থিত আহতদের পরিবারের সদস্যদের সাথে সমবেদনা প্রকাশ করেন । সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক গত ৩১ জুলাই আবুল কালামের ছুটি মঞ্জুর করেন। বর্তমানে তিনি নিজ বাড়িতে শয্যাবিশ্রামে আছেন ।
এ ব্যাপারে আবুল কালাম জানান, ঘটনার সময় আমার কাছে মৃত্যুভয়ই ছিল মুখ্য বিষয়। এখন সুস্থ হতে চলা আমি যে উঠে দাঁড়াতে পারবো এমন আশা ছিল ক্ষীণ। মনে হয় আমি মরতে মরতেই বেঁচে গেলাম ।
জিএন/রতন/এইচ
ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com