ঢাকাবৃহস্পতিবার , ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিনোদন, সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি~ ইমতিয়াজ আহমেদ

ইমতিয়াজ আহমেদ
সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৪ ১২:০৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

আমাদের অনেকের কাছে যা বিনোদন তাই সংস্কৃতি মনে হয়। যে কোন গান, নাচ ইত্যাদিকে সংস্কৃতি বলে মনে করি। কিন্তুু আসলেই কি তাই। প্রকৃত অর্থে বিনোদন ও সংস্কৃতি একই বিষয় নয়। সম্পূর্ন ভিন্ন বিষয়। বিনোদন শুধুমাত্রই সাময়িক আনন্দ উল্লাস আর সংস্কৃতি হলো জাতির সামগ্রিক মানসিক ইতিবাচক প্রকাশরূপ যা রেখাপাত করে মানুষের চিন্তাচেতনায়। অপসংস্কৃতি হলো নেতিবাচক বিকারগ্রস্থতার প্রকাশরূপ যা সম্পূর্ন দেহসর্বস্ব নাচ-গান, নাটক, সিনেমা। যেখানে অশ্লীলতা ভরপুর। যে অশ্লীলতা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।

বিনোদন যে কোনভাবে হতে পারে। খেলার মাধ্যমে, আড্ডার মাধ্যমে, ভ্রমনের মাধ্যমে, গানের মাধ্যমে, নাচের মাধ্যমে বা আরও অন্য কোন মাধ্যমে। রসময় গান বা নাচের মাধ্যমে যে বিনোদন করা হয় তা শুধুমাত্রই মানসিক আনন্দ তৃপ্তির জন্য। এর সাথে সংস্কৃতির বিন্দুমাত্র লেশ বা সম্পর্ক নেই। বিনোদন শুধুই সাময়িক আনন্দ উল্লাস। আর এই রসময় গান বা নাচের মাধ্যমে বিনোদন উপভোগের নামে যখন অশ্লীলতা করা হয় বা প্রকাশ করা হয় তখন তা উগ্র মানসিকতার বিনোদন বৈ কিছু নয়। যা মানুষের মনোজগতকে কলুষিত করে। করে মানসিক বিকারগ্রস্থ। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যক্তিজীবনে, পারিবারিক জীবনে, সমাজজীবনে। এমন কি জাতীয়জীবনেও। ফলে অশ্লীলতা পরিলক্ষিত হয় সর্বত্র।

সংস্কৃতি হলো কোন জাতির জীবনাচার, রীতিনীতি, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, চিন্তাচেতনা, নিজস্ব ইতিহাসের বহি:প্রকাশ। যা নাটক, গান, সিনেমা, নাচ, আবৃত্তি এসবের মাধ্যমে প্রতিটি জাতি প্রকাশ করে থাকে। এই সংস্কৃতিই হলো জাতিগঠনের অন্যতম মাধ্যম। সংস্কৃতির মাধ্যমেই ফুটে উঠে একটি জাতির মানসিক প্রকাশ। যে জাতি সংস্কৃতিগতভাবে যত উন্নত সে জাতির মানসিক বিকাশও তত উন্নত। এই সংস্কৃতিই আবার গড়ে তুলে সাংস্কৃতিক সামাজিক রাজনৈতিক আন্দোলন। সচেতন সাংস্কৃতিককর্মীরা জাগিয়ে তুলে জাতিকে। অতীতে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ বিভিন্ন লড়াই সংগ্রামে সাংস্কৃতিক কর্মীদের সরব উপস্থিতি এর চাক্ষুষ প্রমাণ। বর্তমানেও সচেতন গণমূখী সাংস্কৃতিক কর্মীরা রাজপথে সরব হয়। অন্যায় অপরাধ, সমাজ, জাতি ধ্বংসকারী অপচক্রের অপকর্মের বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিবাদমূখর হয়। জাগিয়ে তোলার প্রয়াস চালায় গণমানুষকে। গণমানুষকে অপচক্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানায়। ডাক দেয় প্রতিরোধের। দাবী তুলে সরকারের নিকট। মানবিকতার উত্তম প্রকাশ ঘটিয়ে সচেতন সাংস্কৃতিক কর্মীরা অসহায়, নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ দুর্বিপাকে ছুটে চলে প্রান্তর থেকে প্রান্তরে। তুলে ধরে মানবতার মানবিক পতাকা।

অপসংস্কৃতির অপর নাম অশ্লীলতা। যার উপজীব্য বিষয় হলো উলঙ্গ বা অর্ধউলঙ্গ দেহসর্বস্ব গান বা নাচ। যা মানুষের মনে জাগিয়ে তুলে কামুক আদিমত্যা। মানুষকে করে তুলে মানসিক বিকারগ্রস্থ। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সর্বত্র। অপসংস্কৃতির বিষবাষ্প অন্ধকারে নিমজ্জিত করে জাতিকে। ফলে বাঁধাগ্রস্থ হয় শুদ্ধ শিল্পকলার স্বাভাবিক সহজাত প্রকাশ। জাতি ধ্বংস করার জন্য একটি সূত্র রয়েছে। তা হলো, “কোন জাতিকে ধ্বংস করতে চাইলে তার ভিতর উগ্র অশ্লীল অপসংস্কৃতি প্রবেশ করিয়ে দাও। দেখবে সে জাতি এমনিতেই ধ্বংস হয়ে যাবে। তোমাকে কষ্ট করতে হবে না।” বর্তমান বিশ্বায়নের যোগের সাথে পাল্লা দিয়ে অপসংস্কৃতিরও বিশ্বায়ন ঘটেছে। অপসংস্কৃতি আজ গ্রাস করেছে বাঙালী জাতিকেও। নষ্ট করছে আমাদের মনোজগত। নষ্ট মনোজগতের কারণে সমাজে বৃদ্ধি পেয়েছে অপরাধ। কারণ, মানুষ যা দেখে তা করে। মনোজগত তাকে সেদিকেই ধাবিত করে।

মানুষের আনন্দ উল্লাস বা নাচ গানের মাধ্যমে সুস্থ বিনোদন করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এই বিনোদনের নামে যখন দেহসর্বস্ব নাচ গান, সিনেমা পরিবেশনা করা হয় তখন তা অশ্লীলতা বা উগ্র বিনোদন বৈ কিছু নয়। যার শতভাগ নেতিবাচক প্রভাব কলুষিত করে মানুষকে ও তার সমাজকে। আর এই অশ্লীলতায় ভরপুর দেহসর্বস্ব উগ্র বিনোদনই অপসংস্কৃতি। এই অপসংস্কৃতির বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে ধ্বংস হয় ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সমাজজীবন সর্বোপরি জাতীয়জীবন। অপরদিকে সংস্কৃতি মানুষকে উজ্জীবিত করে, জাগিয়ে তুলে। বিকশিত করে মানুষের মানবিক চিন্তাচেতনাকে। যার মাধ্যমে জাতির জীবনাচার, রীতিনীতি, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, চিন্তাচেতনা, ইতিহাস প্রকাশিত হয়। আমাদেরকে তাই উগ্র অশ্লীল দেহসর্বস্ব বিনোদন তথা অপসংস্কৃতির গ্রাস থেকে মুক্ত হয়ে ছুটতে হবে শুদ্ধ সংস্কৃতির পানে। এটাই সার্বিকভাবে একান্ত কাম্য। এই শুদ্ধ সংস্কৃতিই বিশ্বের মানচিত্রে।তুলে ধরবে আমাদের সবুজ শ্যামল বাংলা ব-দ্বীপকে। লালন হাছনের বাংলাদেশকে। ভাষাশহীদদের বাংলাদেশকে। মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ বীর শহীদদের বাংলাদেশকে।

লেখক: সভাপতি, সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘ, ময়মনসিংহ

 

জিএন/এইচ

    ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com