ঢাকাশনিবার , ১৬ নভেম্বর ২০২৪

পশ্চিমা লুটেরাদের কালোথাবা থেকে আফ্রিকার দেশগুলোকে মুক্ত করতে প্রয়োজন গণজাগরন

ইমতিয়াজ আহমেদ
নভেম্বর ১৬, ২০২৪ ১২:৪২ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

আফ্রিকা অতি মূল্যবান প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে ভরপুর একটি মহাদেশ। অথচ এর অধিকাংশ দেশের অবস্থান দারিদ্রসীমার নীচে। জীবনধারণের সকল দিক দিয়েই এর দেশগুলো আজও চরম অনুন্নত। এর অন্যতম কারণ পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলো ভাগবাটোয়ারা করে আজও শোষণ করছে আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন রাষ্ট্র। তথাকথিত স্বাধীন রাষ্ট্রগুলো আজও উপনিবেশিক শেকলে বন্দী। অধিকাংশ দেশেই পশ্চিমা শোষকচক্রের পা চাটা তল্পিবাহক সরকার ক্ষমতাসীন। সেসব তল্পিবাহক সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় পশ্চিমারা লুণ্ঠন চালাচ্ছে আফ্রিকার দেশে দেশে। লুট করে নিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ। লুণ্ঠনের বদৌলতে পশ্চিমারা তল্পিবাহক সরকারগুলোকে ক্ষমতায় থাকার জন্য নানান রশদ যোগান দিচ্ছে।

পশ্চিমা শোষকচক্রের হাত থেকে মুক্তির পথ কি? মুক্তির একমাত্র পথ গণজাগরন। গণজাগরনই পারে আফ্রিকার দেশগুলোকে পশ্চিমা শোষণের হাত থেকে রক্ষা করতে। তাই তল্পিবাহক সরকারগুলোকে বিতাড়িত করে গণজাগরনের মাধ্যমে দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা অতীব জরুরী। তাহলেই পশ্চিমারা আফ্রিকার দেশগুলো থেকে তল্পিতল্পা গুঠিয়ে নিতে বাধ্য হবে। সম্প্রতি নাইজারে গণজাগরন সৃষ্টি হয়েছিল, যা বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করছে। গণজাগরনে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পশ্চিমারা তাদের তল্পিবাদকদের মাধ্যমে মরণ কামড় দিবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এই মরণ কামড়ে ভীত হওয়ার কোন অবকাশ নেই। গণজাগরনের শক্তিতে বলিয়ান হয়ে এগিয়ে যেতে হবে মুক্তির পানে।

প্রশ্ন হলো, গণজাগরনে নেতৃত্ব দিবে কারা? নেতৃত্ব দিবে দেশপ্রেমিকেরা। সে নেতৃত্ব সামরিক, নাকি বেসামরিক সেটা মূখ্য নয়। মূখ্য হলো দেশপ্রেমিকদের গণজাগরন। অতীতে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে গণজাগন ঘটেছে। দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব ক্ষমতায় আরোহন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে, জনগণের জীবনমান উন্নতকরণে, বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে দেশকে স্বাবলম্বী করতে বহুমূখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এতে শোষণ লুণ্ঠনের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেসব দেশপ্রেমিক নেতৃত্বকে পশ্চিমারা ষড়যন্ত্র করে হত্যা করেছে। যেমন, পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসো’র প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ক্যাপ্টেন থমাস সাঙ্কারার নাম এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে।

বুরকিনা ফাসো (পূর্ববর্তী নাম আপার ভোল্টা) পশ্চিম আফ্রিকার একটি স্থলবেষ্টিত দেশ, যা ছিল ফ্রান্সের উপনিবেশ। বুরকিনা ফাসো ১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। কথিত স্বাধীনতা লাভ করলেও ফ্রান্সের করায়াত্তে ছিল। ক্ষমতায় থাকতো ফ্রান্সের তল্পিবাহক সরকার। ১৯৮৩ সালে ক্যাপ্টেন থমাস সাংকারা ৩৩ বছর বয়সে বুরকিনা ফাসো’র প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন। সাংকারা দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন তার সাধারণ জীবন, সমাজবাদী কার্যক্রম, অর্থনৈতিক উন্নতি, ক্ষমতাবান গোষ্ঠির সাথে সাহসী দ্বন্দ ও প্রতিরোধের জন্য, সাম্রাজ্যবাদী এবং নয়া উপনিবেশবাদীদের মোকাবিলার জন্য। বিদেশ নির্ভরতা বাদ দিয়ে তিনি স্বনির্ভরতার প্রতি মনোনিবেশ করেন। তিনি মাত্র ০৪ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। এই ০৪ বছরে সাক্ষরতার হার ১৩% থেকে ৭৩% এ উন্নীত করেন। দরিদ্র দেশটিকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে সকল নাগরিকের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ভূস্বামীদের দখলে থাকা জমি কেড়ে নিয়ে সরাসরি চাষীদের মাঝে বিলিয়ে দেন। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ২৫ লক্ষ শিশুকে মেনিনজাইটিস, ইয়েলো ফিভার এবং মিজলসের টীকা দেয়ার কাজ সম্পন্ন করেন। সাহেল অঞ্চলে মরুকরণ রোধকল্পে ০১ কোটি গাছ লাগিয়ে দুর্যোগ প্রতিরোধ করেন। পাকা সড়ক আর রেল লাইন নির্মাণ করে সারাদেশে শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করেন। নারী শিক্ষার্থিদের গর্ভকালীন ছুটি চালু এবং নারীদের প্রশাসনের উচ্চ পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। সেনা সদস্যদের জন্য নির্দিষ্ট দোকানকে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেন, যা ছিল দেশটির প্রথম সুপারমার্কেট। সরকারী ব্যয়ের চরম কৃচ্ছতাসাধনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে নিজ দপ্তরে এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার বন্ধ করে দেন। নিজের বেতন ৪৫০ ডলার নির্থারণ করেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ব্যবহারের জন্য ০১টা গাড়ি, ৪টা মোটরবাইক, ৩টা গিটার, ১টা ফ্রিজ এবং ০১ টা নষ্ট ফ্রিজারে সীমাবদ্ধ করেন। সরকারের হাতে থাকা মার্সিডিজ বেঞ্জের সববহর বিক্রয় করে দেন এবং বুরকিনা ফাসোতে প্রচলিত সবচেয়ে সস্তা গাড়ি মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারণ করে দেন। এভাবে তিনি গণমূখী কার্যক্রম গ্রহণ করে বুরকিনা ফাসোকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করেন। ফলে চক্ষসুল হয়ে পড়েছিলেন পশ্টিমা উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর নিকট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের প্রত্যক্ষ মদদে এক সামরিক অভ্যূত্থানের মাধ্যমে ১৯৮৭ সালে থমাস সাঙ্কারাকে ক্ষমতাচ্যূত করা হয় এবং নির্মমভাবে হত্যা করা।হয়। সাঙ্কারা কর্তৃক গৃহীত সমস্ত জনমূখী প্রকল্প বাতিল করে বিদেশি, বিশেষ করে ফ্রান্সের জন্য লুটকেন্দ্রিক ব্যাপক সুযোগের দ্বার খুলে দেওয়া হয়। যার ফলে বুরকিনা ফাসো পুনরায় একটি অন্যতম দরিদ্র দেশে পরিণত হয়।

প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ লুটের জন্য পশ্চিমা উপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী কখনোই চায় না আফ্রিকার দেশগুলো স্বাবলম্বী হোক। তারা চায় আজ্ঞাবহ সরকার ক্ষমতায় আসীন থাকুক আফ্রিকা মহাদেশের দেশে দেশে। আফ্রিকার দেশগুলোতে যত গণজাগরন ঘটবে ততই উপনিবেশিক পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর রাহুমুক্ত থাকবে। গণজাগরনের মাধ্যমে সৃষ্ট দেশপ্রমিক সরকার দেশকে রক্ষা করবে পশ্চিমা শোষণ থেকে। তাই গণজাগরন ঘটুক আফ্রিকার দেশে দেশ। প্রতিষ্টিত হোক দেশপ্রেমিক সমাজবাদী সরকার। রাহুমুক্ত থাকুক প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ আফ্রিকার দেশগুলো। অর্থনৈতিক মুক্তি আসুক আফ্রিকার দেশে দেশে। উন্নত হোক আফ্রিকানদের জীবনমান।

-লেখক পরিচিতি: গণসাংস্কৃতিক সংগঠক, সভাপতি, সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘ, ময়মনসিংহ।

    ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com