ঢাকাসোমবার , ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

থার্টিফাস্ট নাইট: অপসংস্কৃতির দানব~ইমতিয়াজ আহমেদ

ইমতিয়াজ আহমেদ
ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪ ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

ইংরেজি বৎসর। সারাবিশ্বে সর্বাধিক  প্রয়োগকৃত আন্তর্জাতিক বৎসর। ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক, দাপ্তরিক, সরকারী, বেসরকারী সকলস্তরেই ইংরেজি বৎসরের দিন তারিখ সময় ব্যবহার করা হয়।

কোনকিছু শুরু হলে তার শেষও হয়। পরবর্তিতে আবার শুরু হয়। এটাই নিয়ম। তেমনি জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে ইংরেজি বৎসর শুরু হয় এবং ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়। আর এই ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতই হলো ‘থার্টিফাস্ট নাইট’। ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট শেষে ০০:০০ সময়ে নতুন বৎসরকে স্বাগত জানানো হয়। এটাকে ঘিরে উম্মাদনাও শুরু হয়।

নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে বাহ্যিকভাবে আস্তে আস্তে থার্টিফাস্ট নাইট পালন শুরু হয়। ঢাকা চট্টগ্রাম বা অন্যান্য বড় বড় শহরকেন্দ্রিক কিছু টাকাওয়ালারা তা পালন করতে শুরু করে। তথ্যপ্রবাহের অবাধ বিচরনে এখন তা ভাইরাসের মত ছেয়ে গিয়েছে সারাদেশ এবং তা সকলস্তরে।

অন্ধকারের যে কোন আয়োজনে উম্মাদনা থাকে। আর এই উম্মাদনার প্রতি মানুষের আকর্ষণও থাকে। কারণ, অন্ধকারে অনেককিছু আয়োজন করা যায় বা অনেককিছু করা যায়। যা সচরাচর আলোতে করা সম্ভব নয়। থার্টিফাস্ট নাইটের আলোআঁধারিতে সেসব করা যায় বলে আয়োজনও চলে তেমন।

অপসংস্কৃতির আগ্রাসন ভয়ানক। যা মানুষের মানসিকতাকে নেতিবাচকভাবে চরম পরিবর্তন করে। নিজের অজান্তেই পরিবর্তন ঘটে মানসিকতার। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে সকলক্ষেত্রেই। পাশ্চাত্যের থার্টিফাস্ট নাইট সেভাবেই প্রভাব ফেলছে আমাদের সংস্কৃতিতে সমাজে সর্বোপরি মানসিকতায়। আমরা না বুঝেই তার ডোপ গিলছি।

প্রশ্ন হলো, আমরা কেন অন্ধকারের উম্মাদনার থার্টিফাস্ট নাইট পালন করব? বাঙালী জাতির জীবনবোধের সাথে কি এর আদৌ আত্মিক ও মানসিক সম্পর্ক রয়েছে? এটা কি আমাদের সংস্কৃতির অংশ? কখনও নয়। আমরা আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোন থেকে ইংরেজি দিন তারিখ সময় ব্যবহার করলেও এর সাথে আমাদের আত্মিক, মানসিক, সাংস্কৃতিক কোন সম্পর্ক নেই। যার সাথে এ ধরনের সম্পর্ক নেই তা কখনোই আমাদের সংস্কৃতির অংশ হতে পারে না।

থার্টিফাস্ট নাইট শতভাগ আমদানী করা অপসংস্কৃতি। যা শুধু উম্মাদনা সৃষ্টিতেই পারঙ্গম। নিজেদের আত্মপরিচয়ের ঠিকানা বাঙালী সংস্কৃতিকে বাঁচানোর স্বার্থে থার্টিফাস্ট নামক অপসংস্কৃতির দানব থেকে সচেতনভাবেই দূরে থাকাই একান্ত প্রয়োজন। অপসংস্কৃতি গ্রহণ নয় বর্জন করাই দায়িত্ব ও কর্তব্য। জাতীয় স্বকীয়তার সাথে এই দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন থেকে দূরে থাকা কখনই কাম্য নয়।

মহাকবি মধুসুদন দত্ত ধর্মান্তরিত হয়ে ইংরেজ হতে চেয়েছিলেন। নামের প্রথমে মাইকেল বসিয়েছিলেন। তিনি কি ইংরেজ হতে পেরেছিলেন? পারেননি। বাঙালী পরিচয়েই জীবনের যবনিকাপাত হয়েছে। বিষয়টি আমাদের সকলের জন্য অনুধাবনীয়।

 

লেখক: প্রাবন্ধিক, গণসাংস্কৃতিক কর্মি।

    ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com