ময়মনসিংহশনিবার , ১৮ জুলাই ২০২০

হালুয়াঘাটে অসহায় ভিক্ষুক মাতার পাশে ঢাবি ছাত্রলীগ সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস

কমল সরকার
জুলাই ১৮, ২০২০ ৫:১৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

জমি বিক্রি করে ছেলে ঢাকায়, বৃষ্টিতে ভিজে ভিক্ষা করেন মা এই শিরোনামে ‘গৌরীপুর নিউজ অনলাইন পত্রিকায়’ নিউজ উঠার পর ওই ভিক্ষুক মা’র বাড়ীতে এক মাসের খাদ্য সামগ্রী নিয়ে ছুটে যান ঢাবি ছাত্র লীগ সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস। ২৫ কেজি চাল, ৩ কেজি ডাল, ৫লিটার তেল,২কেজি লবন, ৩ কেজি চিনি, সেমাই ২ প্যাকেট, ১শ ২০ টাকা’র মসলা, গুড়া দুধ, ৫কেজি পেঁয়াজ, ৫কেজি আলু, ২ কেজি রসুন, আধা কেজি আদা, ১ কেজি মুড়ি, ৪টি সাবান দিয়ে আসেন ওই অসহায় ভিক্ষুক মাতাকে। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা বলেন , প্রয়োজন হলে আরো সাহায্য পাঠানো হবে।

উল্লেখ্য বয়সের ভারে শরীর আর চলে না। শরীরের গঠন জীর্ণশীর্ণ। দেখলে বোঝা যায়, রোগ-শোকে অনেকটাই ক্লান্ত তিনি। বয়স তার ৭০ বছর। খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন হতদরিদ্র এই বিধবা নারী। এ অবস্থায় দু’মুঠো খাবার জোগাতে রাস্তায় নেমেছেন তিনি। ভিক্ষার জন্য বসে পড়লেন রাস্তার পাশে। এরই মধ্যে শুরু হলো বৃষ্টি। বৃষ্টিতে ভিজে সবার কাছে হাত পাতলেন তিনি। ঘরে খাবারের কতটা সঙ্কট থাকলে বৃষ্টিতে ভিজে রাস্তার ড্রেনের পাশে কাদা-মাটিতে ভিক্ষার জন্য বসেছিলেন এই বৃদ্ধা-তা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছিলো।

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ৪ নম্বর হালুয়াঘাট ইউনিয়নের পূর্ব গোবরাকুড়া গ্রামের সালেমুন নেছার (৭০) কথা। তার স্বামী হাফিজুর রহমান ১০ বছর আগে মারা যান। তখন থেকে সালেমুন নেছার জীবনযুুদ্ধ শুরু হয়। এটি এখন কঠিন জীবনযুদ্ধে রূপ নিয়েছে। তাদের সংসারে এক ছেলে ছিল। স্বামীর অল্প কিছু জমি ছিল। ছেলে বড় হয়ে জমি বিক্রি করে অসহায় মাকে ছেড়ে ঢাকায় চলে যান। নিজের সন্তান কি করে মা আজো জানেন না। বৃদ্ধা মা কেমন আছেন তার খোঁজখবর নেন না একমাত্র সন্তান। দীর্ঘদিন সালেমুন নেছা খেয়ে না খেয়ে থেকেছেন। উপায় না পেয়ে দু’মুঠো খাবার জোগাতে ভিক্ষার পথ বেছে নেন। মানুষের কাছ থেকে যা পান তা দিয়ে কোনো রকম খেয়েদেয়ে বেঁচে আছেন তিনি। এখন বয়সের ভারে ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না। তবুও প্রতিদিন রাস্তায় না নামলে তার পেটে খাবার জোটে না। এজন্য প্রতিদিনই তাকে ভিক্ষা করতে হয়।

বৃহস্পতিবার (০৯ জুলাই) সকালে হালুয়াঘাট উপজেলার হালুয়াঘাট বাজারে ভিক্ষা করতে আসেন সালেমুন নেছা। তখন বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে বাজারের সব মানুষ দৌড়ে বিভিন্ন দোকানে আশ্রয় নেন। এ সময় বৃদ্ধা সালেমুন নেছা রাস্তার পাশে বসে বৃষ্টিতে ভিজছিলেন। আশপাশের লোকজন এমন দৃশ্য দেখে চোখের পানি ফেলেছেন। দীর্ঘক্ষণ বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট কাদা-পানিতে একাকার হয়েছিল। ঘণ্টাব্যাপী রাস্তায় বসেছিলেন ওই বৃদ্ধা। এ অবস্থায় মুখটা কাপড় দিয়ে ডেকে ভিক্ষার থালার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন সালেমুন নেছা। তখন পর্যন্ত কেউ তাকে চিনতে পারেননি। সবার মুখে ছিল একই কথা, আহারে! কে এই বৃদ্ধা। এমন দৃশ্য দেখে চোখ ফেরাতে পারেননি সুমন আহমেদ। তিনি একই উপজেলার বাসিন্দা। হঠাৎ বৃদ্ধাকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখে একটি ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেন সুমন। তার ওই ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। হালুয়াঘাট বাজারের কয়েকজন দোকানদার জানান, মাঝে মধ্যে দেখি এই বৃদ্ধা ভিক্ষা করতে আসেন। ভালো করে হাঁটতে পারেন না তিনি, দেখে খুব মায়া লাগে। কয়েক দিন আগে বৃষ্টির মধ্যে ড্রেনের পাশে বসে ভিক্ষা করার দৃশ্য দেখে চোখে পানি চলে আসে আমাদের। তার জন্য বয়স্ক কিংবা বিধবাভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করলে এভাবে রাস্তায় বসতে হতো না।

এ বিষয়ে হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজাউল করিম মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যায় বলেন, বৃষ্টির মধ্যে ড্রেনের পাশে বসে ওই বৃদ্ধার ভিক্ষা করার ছবি দেখেছি আমরা। ইতোমধ্যে অসহায় বৃদ্ধা সালেমুন নেছার বাসায় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে। তার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি। তাকে সরকারিভাবে সহায়তা দেয়া হবে। থাকার জন্য সালেমুন নেছাকে একটি ঘর তৈরি করে দেয়া হবে। একই সঙ্গে তাকে একটি ভাতার কার্ড করে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

    ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com