ময়মনসিংহরবিবার , ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২
আজকের সর্বশেষ সবখবর

নিজে বিয়ে করলেও সাবেক প্রেমিক অন্যত্র বিয়ে করায় ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ড

জেলা প্রতিনিধি
ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২২ ১০:৫২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

এইসএসসি পরীক্ষার্থী ইসরাত জাহান মিম। পড়াশোনার পাশাপাশি নার্স হিসেবে চাকরি করতেন নরসিংদীর একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। তার সহপাঠী মীর মাইনুল হকও চাকরি করতেন স্থানীয় একটি ডেন্টাল চেম্বারে।

পড়াশোনা করতে গিয়ে সহপাঠী হওয়ায় তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। যদিও উভয়ের পরিবার জানত তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ছাড়া আর কিছু নেই। এদিকে গোপনে তারা প্রেম চালিয়ে যাচ্ছিল।

এরমধ্যেই প্রেমিকা মিম যে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকরি করতেন, সেটির মালিক ডাক্তারকে হঠাৎ করেই গোপনে বিয়ে করে ফেলেন। এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি জেনে প্রেমিক মাইনুলও অন্য মেয়েকে বিয়ে করে ফেলেন। এতেই বিপত্তি বাধে। কয়েক মাস একসঙ্গে থাকার পর প্রেমিকা মিম ও ওই ডাক্তারের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এদিকে সাবেক প্রেমিক মাইনুল বিয়ে করে ফেলেছেন জেনে তাকে ভয়ঙ্করভাবে হত্যার পরিকল্পনা করেন মিম। তার সেই পরিকল্পনা সফলও হয়। ঘটনাটি ঘটেছে নরসিংদীর পলাশ উপজেলায়।

জানা গেছে, নরসিংদীর পলাশে গোপনে অন্য মেয়েকে বিয়ে করায় চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে অচেতন করে মীর মাইনুল হক নামে এক যুবককে গলা কেটে হত্যা করেছেন ইসরাত জাহান মিম নামের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী।

গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এমনটাই জানিয়েছে ঘাতক ওই প্রেমিকা। এর আগে গতকাল শনিবার (১২ ফেব্রয়ারি) বিকেলে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল পৌর এলাকার ঘোড়াশাল বাজারে টুথ অফিস নামের একটি ডেন্টাল চেম্বার থেকে মাইনুলের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পলাশ থানা পুলিশ।

নিহত মীর মাইনুল হক ঘোড়াশাল দক্ষিণ চরপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল ফেলু মীরের ছেলে। তিনি ঘোড়াশাল মুসাবিন হাকিম ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। পাশাপাশি ঘোড়াশালে টুথ অফিসে সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

পুলিশ জানায়, মাইনুল হকের সঙ্গে ঘোড়াশাল খিলপাড়া গ্রামের বাদল মিয়ার মেয়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইসরাত জাহান মিমের দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত ৬ ফেব্রুয়ারি মাইনুল হক গোপনে অন্য মেয়েকে বিয়ে করায় সেটি মেনে নিতে পারেননি মিম। একপর্যায়ে গত বৃহস্পতিবার ( ১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে দেখা করার কথা বলে মোবাইলে মাইনুলকে বাড়ি থেকে ডেকে আনেন মিম। পরে ডেন্টাল অফিসে গিয়ে আগে থেকে কিনে রাখা চেতনানাশক ইঞ্জেকশন মাইনুলের শরীরের পুশ করেন। এতে মাইনুল অচেতন হয়ে পড়লে ডেন্টাল ক্লিনিকের ধারালো চাকু দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে পালিয়ে যান তিনি।

পালিয়ে যাওয়ার সময় বাইর থেকে চেম্বারের প্রধান দরজা তালাবদ্ধ করে রাখেন ঘাতক মিম। এদিকে বিয়ের ৫ দিনের মাথায় স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত মাইনুলের স্ত্রী শ্রাবন্তী বেগম। শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো পরিবার।

নিহতের স্ত্রী শ্রাবন্তী বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, গত ৬ ফেব্রুয়ারি ভালোবেসে তাদের কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে বিয়ে হয়। মাইনুল ইসরাত জাহান মিমের সঙ্গে একই কলেজে পড়শোনা করতেন। তার সঙ্গে পূর্বে প্রেমের কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা, তা জানা ছিল না শ্রাবন্তীর। এ বিষয়ে কখনোই মাইনুল কিছুই বলেননি তাকে।

শ্রাবন্তী বলেন, গত বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চেম্বারে যাওয়ার কথা বলে মাইনুল বাড়ি থেকে বের হন। রাত হয়ে গেলে বাড়ি না ফেরায় তার মোবাইলে কল দিলে তার নম্বর বন্ধ পেয়ে চেম্বারে গিয়ে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ পাই। পরে একদিন পার হয়ে যায়। তবুও তার সন্ধান না পাওয়ায় নিখোঁজ উল্লেখ করে থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। শেষ পর্যন্ত স্বামীর মরদেহ ফেরত পেলাম।

নিহতের বড় বোন সুবর্ণা ইয়াসমিন মনি বলেন, গত ৫ মাস আগে ডায়গনিস্টিকের মালিকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে তাকে বিয়ে করেন। আবার বিয়ের ২ মাস পর তাদের ছাড়াছাড়িও হয়ে যায়। কিন্তু মাইনুলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের বিষয় আমরা কেউই কিছু জানতাম না।

ভাই হত্যার বিচার চেয়ে সুবর্ণা বলেন, আমরা এই হত্যার কঠিন বিচার চাই।

এদিকে ইসরাত জাহান মিমের মামা মেহিন আহম্মেদ বলেন, মিম শিশু বয়স থেকেই ঘোড়াশাল খিলপাড়া গ্রামের নানার বাড়িতে বসবাস করে আসছে। তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হওয়ার পর সে তার নানার কাছেই বড় হচ্ছে। এবার সে এইচএসসি পরীক্ষাও দিয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নার্সের চাকরি করতো। সেখানে এক ডাক্তারকে গোপনে বিয়ে করেছিল, আবার কয়েকদিন পর তাদের মধ্যে ছাড়াছাড়িও হয়ে যায়। মাইনুল তার একজন ভালো বন্ধু হিসেবেই জানতাম এর বেশি কিছু না।

এ বিষয়ে পলাশ থানার ওসি মোহাম্মদ ইলিয়াস জানান, মরদেহ উদ্ধারের পর তদন্ত নামে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের ৩ ঘণ্টা পর হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ইসরাত জাহান মিমকে গ্রেফতার করলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করেন। তিনি জানান মাইনুলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের প্রেম ছিল। মাইনুল গোপনে অন্য মেয়েকে বিয়ে করে নেয়ায় এর প্রতিশোধ নিতে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

    ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com