১৯৭১’র মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ২১ আগস্ট পাক-হানাদার বাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে গিয়ে এদিন ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শালিহর গ্রামের ১৪ জন নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এসময় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয় বেশ কয়েকটি বাড়িতে। পাক-বাহিনী ধরে নিয়ে যায় এ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হাসিমের বাবা ছাবেদ হোসেন বেপারীকে।
শনিবার (২১ আগস্ট) সন্ধ্যায় শালিহর বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধে উপজেলা প্রশাসন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, বিভিন্ন সংগঠন ও স্থানীয় লোকজন বিভিন্ন কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে গণশহীদদের স্মরণ করেছে। এ উপলক্ষে কর্মসূচীর মধ্যে ছিল- গণ শহীদদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে আর্থিক অনুদান বিতরণ, আলোচনা সভা, পুষ্পমাল্য অর্পন ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক ইউএনও হাসান মারুফের সভাপতিত্বে ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড পৌর শাখার সভাপতি মশিউর রহমান কাউসারের সঞ্চালনায় এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুর রহিম ও ডেপুটি কমান্ডার মোঃ নাজিম উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এসো গৌরীপুর গড়ি’র প্রধান সমন্বয়ক আবু কাউছার চৌধুরী রন্টি, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি আবুল ফজল মুহম্মদ হীরা প্রমুখ।
এতে অংশগ্রহন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক খান, নুরুল হক, প্রদীপ বিশ^াস, আবুল হাসিম, সাংবাদিক ফারুক আহাম্মদ, রায়হান উদ্দিন সরকার, জহিরুল হুদা লিটন, আরিফ আহম্মেদ, রাকিবুল ইসলাম, তোফাজ্জল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড পৌর শাখার সাধারণ সম্পাদক উজ্জল চন্দ্র, এসো গৌরীপুর গড়ির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মোঃ বিপ্লব, সদস্য রানা, বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান মজিবুর রহমান, সুপক রঞ্জন উকিল, রাজিবুল হক, জহিরুল ইসলাম ছোটন, ফারুক মিয়া, কাজী সেতাউল ইসলাম জিলানী, আল মুসা ভবির অন্তর, রুবেল মিয়া, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নাহিদ হাসান সোহাগ প্রমুখ।
উল্লেখ্য ১৯৭১’র ২১ আগস্ট পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা রেলযোগে গৌরীপুরে আসে। এদিন তারা স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজতে গিয়ে পশ্চিম শালিহর গ্রামে হানা দিয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হাসিমের বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। এসময় পাক বাহিনী ধরে নিয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাসিমের বাবা ছাবেদ হোসেন বেপারীকে। এর আগে ১৬ মে ধরে নিয়ে যায় সাংবাদিক সুপ্রিয় ধর বাচ্চার বাবা মধু সূদন ধরকে।
পাক বাহিনী অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে কান্ত হয়নি এ গ্রামের ১৪ জন নিরীহ মানুষকে ধরে এনে শালিহর কদমতলা নামক স্থানে ব্রাস ফায়ার করে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরে সেখানেই তাদেরকে কবর দেয়া হয়। পাক-বাহিনীর ব্রাস ফায়ারে গণশহীদরা হলেন- এ উপজেলার ২ নং গৌরীপুর ইউনিয়নের শালিহর গ্রামের মোহিনী মোহন কর, জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর, যোগেশ চন্দ্র বিশ্বাস, নবর আলী, কিরদা সুন্দরী, শচীন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস, তারিনী কান্ত বিশ্বাস, খৈলাস চন্দ্র নমদাস, শত্রগ্ন নমদাস, রামেন্দ্র চন্দ্র সরকার, অবনী মোহন সরকার, দেবেন্দ্র চন্দ্র নমদাস, কামিনী কান্ত বিশ্বাস ও রায় চরণ বিশ্বাস।
২০০৮ ইং সনে সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মরহুম ডাঃ ক্যাপ্টেন (অবঃ) মজিবুর রহমান ফকিরের হস্তক্ষেপে উল্লেখিত বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। ২০১৮ সনে জেলা পরিষদ সদস্য এইচএম খায়রুল বাসারের হস্তক্ষেপে স্মৃতিসৌধটি সংস্কার ও তাতে গণ শহীদদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। চলতি বছর (২০২১) গণপূর্ত বিভাগের অধীনে ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে গণ শহীদদের স্মরণে একটি নতুন স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।
ইমেইলঃ news.gouripurnews@gmail.com